• ঢাকা
  • বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০১৯, ১০:৫৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৩১, ২০১৯, ১০:৫৩ এএম

বিপাকে ক্রেতা-বিক্রেতারা 

নওগাঁয় পশুর হাটে দালালদের দৌরাত্ম্য

নওগাঁয় পশুর হাটে দালালদের দৌরাত্ম্য

সিংহী হাজার, দিক শ, তিন বান্ডিল, আরানী, মিডি শ, মিডি হাজার এ রকম নানা সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করা হয় কোরবানির পশুর হাটে। নওগাঁর মহাদেবপুরে গরু ছাগল ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য হাটে আসা দালালরা (মধ্যস্থতাকারী) এ ভাষা ব্যবহার করছেন। এ ভাষা শুধু তারাই বোঝেন। ক্রেতা-বিক্রেতাকে বুঝতে না দেয়ার জন্য দালালদের মধ্যে ভাষাটি প্রচলিত আছে যেটা তারাই তৈরি করেছে। তবে কে কখন থেকে এই ভাষার প্রচলন করেছেন তা কেউ বলতে পারেননি। 

মানুষকে বোকা বানানোর জন্য সৃষ্টি দালালদের নিজস্ব এ ভাষা। এটি গরুর দালালি ভাষা বলে পরিচিত।

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উপজেলার প্রতিটি হাটে দালালি ভাষায় পরাস্ত হয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন পশু ক্রেতা-বিক্রেতারা। দালালদের কাছে এক রকম জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। হাটগুলোতে যত গরু-ছাগল তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দালাল। গরু প্রতি গড়ে অন্তত ২-৪ জন করে দালাল এবং ব্যাপারী তো আছেই। ব্যাপারীদের কথা- গত বছর কোরবানির হাটে এত দালাল ছিল না। এবার এত দালাল যে কোথেকে এলো তাও এক রহস্য।

মহাদেবপুর, মাতাজি, হাট-চকগৌরী হাটে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির গরু দালাল ও ব্যাপারী মিলেমিশে একাকার। দালালদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এক ক্রেতা বললেন, ‘কোনটা দালাল কোনটা ব্যাপারী বোঝাই কঠিন।’ আরেক ক্রেতা বললেন, দালালরা এতটাই অভিনয়গুণ সম্পন্ন এদের হাটে না নামিয়ে সিনেমায় নামানো দরকার।

একটি গরু বেচাকেনার সময় ক্রেতার সামনে গরুর মালিক বা বিক্রেতাকে আসতেই দেয় না তারা। আর গরু বিক্রির সাথে কমপক্ষে দু’জন দালাল থাকে। তারা গরুটি প্রকৃতপক্ষে কত টাকায় বিক্রি হলো তা বিক্রেতাকে জানতেই দেয় না। তবে তাদেরকে একটি বিক্রয় দাম আগেই বলে থাকে। 

সরেজমিনে মহাদেবপুর ও মাতাজি হাটে গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রেতারা হাটে গরু নিয়ে আসার সাথে সাথে দালাল চক্রের হাতে পড়তে হচ্ছে। প্রতিটি হাটে সংঘবদ্ধ দালালরা কৌশলে গরু-ছাগল বিক্রির জন্য বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দালালদের ভাষায়- বিক্রেতাদের গিরিহাটি এবং ক্রেতাদের মাছি বলা হয়। দালালরা তাদের নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে ক্রেতা-বিক্রেতার চোখ ফাঁকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালদের সাংকেতিক ভাষার অর্থ। তাদের নিজস্ব ভাষার অর্থ হলো- বান্ডিল-১ হাজার, সিংহী হাজার-৩ হাজার, ডোংগা-২ হাজার, দিকশো-১ হাজার, আরানী-২ হাজার ৫শ, চামটি হাজার-৪ হাজার, বুন্নি হাজার-৫ হাজার, টিপি হাজার-৬ হাজার, ঝালি হাজার-৭ হাজার, বর্ষি হাজার-৮ হাজার, খুটাল-৯ হাজার, দিক হাজার-১০ হাজার, কালাই হাজার-১১ হাজার, বছর হাজার-১২ হাজার, মিডি হাজার-১৩ হাজার, দু’ঝালি-১৪ হাজার, দু’বর্ষি-১৬ হাজার, দু-’খুটাল-১৮ হাজার, দু’বান্ডিল-২০ হাজার, বুন্নিশত-৫শ, ধোলাই হাজার-১৭ হাজার, তেরি হাজার-১৯ হাজার, ঝুড়ি হাজার-২০ হাজার, দু’কালাই-২২ হাজার, পোয়া হাজার-২৫ হাজার, বুন্নি বান্ডিল-৫০ হাজার, টিপি বান্ডিল-৬ হাজার। যেমন-চার বান্ডিল ডোংগা হাজার খাপ- অর্থ ৪০ হাজার ভেঙ্গে দুই হাজারের নিচে ৩৮ হাজারের মধ্যে। আবার  চার বান্ডিল ডোংগা হাজার উপর মানে ৪২ হাজারের বেশি।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে উপজেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজার ৩শ ২৭ হাজার। 

উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম খুরশিদ আলম জানান, উপজেলায় কুরবানির জন্য ১৮ হাজার ২২৯টি গরু, ভেড়া ও ছাগল প্রস্তুত করেছেন করেছেন খামারিরা। অবশিষ্ট পশুগুলো অন্য জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করছেন খামারিরা। উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী খামারিরা ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করেছেন।

 মহাদেবপুর হাটের কয়েকজন দালাল জানান, তারা পশুর দাম করার সময় সাধারণত নিজস্ব সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার পক্ষে একজন ও বিক্রেতার পক্ষে আরেকজন দালাল দাম নিয়ে দর-কষাকষি করেন। দাম চূড়ান্ত হলে ক্রেতার পক্ষের দালাল বিক্রেতার পক্ষের দালালকে টাকা দিয়ে দেন। সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করায় একটি পশু কত টাকায় বিক্রি হলো, তা ক্রেতা ও বিক্রেতা জানতে পারেন না। ওই দুই দালালই পশুর একটি দাম নির্ধারণ করে বিক্রেতাকে সে অনুযায়ী টাকা দিয়ে দেন। ওই টাকা দেওয়ার পর বাকিটা তারা ভাগ করে নেন।

এ দালালি ভাষা নিয়ে মহাদেবপুর এবং মাতাজি হাটের দালাল ছামাদ, সিরাজুল, জাহিদুল ও ইসলাম জানান, এটা আমাদের নিজস্ব তৈরি করা ভাষা। এ ভাষা দিয়েই আমরা বিভিন্ন হাটে গরু কেনাবেচা করে থাকি। এতে আমাদের লাভ ভাল হয়। ক্রেতা-বিক্রেতারা অনেকেই এ ভাষা বুঝতে পারেন না। পুঁজি ও পরিশ্রম ছাড়াই এ পেশায় রোজগার ভাল বলেও জানান তারা।

কেএসটি

আরও পড়ুন