রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশন পশু জবাই করার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার পরও যত্রতত্র পশু জবাই করতে দেখা গেছে। রাস্তায়, অলিগলিতে, বাসার সামনের আঙিনায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পশু জবাই করেছেন অনেকেই, যা পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনগণের চলাচলেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
জানা গেছে, সকালে ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের পরপরই পশু কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। পরিবেশ দূষণ এড়াতে বরাবরের মতো এবারও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন পশু জবাইয়ের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে। তারপরও নির্দেশ উপেক্ষা করে বরাবরের মতই নগরজুড়ে রাস্তায় ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে।
জানা যায়, ঈদুল আজহায় পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে স্বাভাবিক সময়ের থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি বর্জ্য জমে থাকে। যা পরিষ্কারে প্রতিবারই বেগ পেতে হয় দুই সিটি করপোরেশনকে। এ প্রক্রিয়াকে সহজ করতে গত কয়েক বছরের মতো এবারও সবগুলো ওয়ার্ডে কিছু স্থান নির্ধারণ করে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
এবার ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে পাঁচটি করে মোট ২৭০টি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। আর ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডে পাঁচটি করে নির্ধারিত ছিল ৩৭৫টি পশু কোরবানির স্থান। এসব স্থানে পশু নিয়ে এসে কোরবানি দিতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান ছিল দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। উত্তরের বাসিন্দাদের উদ্বুদ্ধ করতে নির্ধারিত স্থানে এনে পশু কোরবানি দেন খোদ মেয়র আতিকুল ইসলাম। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে দুই সিটির বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানের তুলনায় বাসাবাড়ির সামনে কিংবা সড়কেই পশু কোরবানি দিতে দেখা যায়। ফলে অনেকটা ফাঁকা পড়ে থাকে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত নির্দিষ্ট পশু কোরবানির স্থানগুলো।
নাজিম উদ্দিন রোডের বাসিন্দা শামীম হাসান বলেন, নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিলে মাংস আনা নেওয়ায় একটা ঝামেলা ও ভিড়ভাট্টা লেগেই থাকে। তার চেয়ে নিজ দায়িত্বে কোরবানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলব।
অনেকেই নিজেদের বাড়ি থেকে কোরবানির স্থান দূরে হওয়াকে দায়ী করেন। অনেকেই আবার মাংস পরিবহনের ঝামেলা এড়াতে ও সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে না পারায় নিজেরাই নিজেদের মতো করে কোরবানি দিচ্ছেন। তারা বলছেন, সেখানে কোরবানি দিলে মাংস আনা-নেওয়ায় একটা ঝামেলা। বসার চেয়ার নেই। আর এখানে নিজের বাসার সামনে নিজেদের চেয়ারে বসে আছি। সিটি করপোরেশনকে দিলে কখন আমার মাংস দিয়ে যেত কে জানে। তাই এখানেই ভালো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকায় পাঁচ লাখের মত পশু কোরবানি হয়। এ থেকে তৈরি বর্জ্য সরিয়ে নিতে মাঠে রয়েছেন দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় ১৮ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ইতোমধ্যেই তারা অনেক জায়গায় কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
মহাখালী পশু জবাইখানায় যারা কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন, তাদের পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুত বাবদ ২৫ শতাংশ খরচ সিটি করপোরেশন বহন করবে বলে জানিয়েছেন উত্তরের মেয়র। উত্তর সিটির পক্ষ থেকে এবার পশু কোরবানির জন্য ১০০ জন ইমাম এবং ২০০ জন মাংস প্রস্তুতকারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
এইচ এম/ এমএ/এমএইউ/ একেএস