
শনিবার বেলা প্রায় ১টা। রাজধানীর মিরপুর ৭ নম্বরের বস্তিতে পোড়া ধ্বংস্তূপ জুড়ে মানুষ আর মানুষ। কেউ ভুক্তভোগী, কেউ দর্শনার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সংবাদকর্মী। বস্তিতে আগুল লাগা নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা, সমালোচনা, জানতে চাওয়া, জানাতে চাওয়া ইত্যাদি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছিল আগুনে সর্ব্স্ব হারানো মানুষদেরর খাওয়া-দাওয়া তো কিছু হচ্ছে না। এই দুপুর বেলায় তারা কী খাবে?
একই সময়ে বস্তির আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া ঘরগুলোয় চলছে রান্নাবান্না। বাঁশ–কাঠের মতো সব দাহ্যসামগ্রী দিয়ে তৈরি এসব ঘরের চুলায় চুলায় তখন জ্বলছে বাঁশ–কাঠেরই আগুন। প্রায় একই বক্তব্য তাদের। তারা বলছিলেন, ‘আল্লায় এবারের মতো যখন বাঁচায়ে রাখছে, ছাওয়াল–পাওয়াল নিয়া খাওন তো লাগবো। ক্ষিদায় তো কাউরে ছাড়ে না। এইখান থেকে আগুন লাইগা যদি মরণ আসে, তো এইভাবেই মরা লাগবো আরকি!’
কথায় বলে, ‘ঘর পুড়লে কিছু থাকে, নদী ভাঙ্গনে কিছুই থাকে না’। তবে মিরপুরের এই পোড়া বস্তির ক্ষেত্রে তা খাটে না। কারণ এখানকার ভুক্তভোগীরা তো ঘরই খুঁজে পাচ্ছেন না। পুরো বস্তিময় শুধু পোড়া টিন আর টিন। এর নিচে চাপা পড়ে আছে হাজারো পরিবারের স্বপ্ন-সংসার সব। ঘর তো দূরের কথা, ঠিকমতো কোনো গলিই নির্ধারণ করা যাচ্ছে না সেখানে। গলি নির্ধারণ করতে পারলে তো ঘর খোঁজার প্রসঙ্গ। আর ঘর পেলে পরে হবে আগুনে পুড়ে কিছু অবশিষ্ট আছে কি নেই।
তবুও বস্তিতে পোড়া ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। সেখানেই খুঁজে ফিরছে কিছু অবশিষ্ট আছে কি না। বেশির ভাগ ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেনি বাসিন্দারা। হাজারো ঘর পুড়ে গেছে। ঈদের কারণে বস্তিতে থাকা বেশির ভাগ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। আগুনের খবর পেয়ে অনেকে ফিরে এসেছেন ঢাকায়।এসেই ঘরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যাবেন কীভাবে? কোন গলিতে? কোথাও গলি বা ঘর বলে কিছু নেই। সব সমান হয়ে গেছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরপুর ৭ নম্বরের বস্তিটি অবৈধ। এখানে বেশির ভাগ বাড়ি টিন ও কাঠের। একেকটি বাড়ি টিন দিয়েই তিন-চারতলা করা হয়েছে। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে তৈরি করা এসব ঘরের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। বস্তির আশপাশের বাড়িগুলোতেও আগুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট কাজ করেছে। র্যাব, পুলিশ, ওয়াসা ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
আগুনের খবর পেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্যা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এমএ/ এফসি