
বহু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রকাশিত হলো ভারতের আসাম রাজ্যে সংশোধিত নাগরিক তালিকা (এনআরসি)। শনিবার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ১০টার কিছু পরে ওয়েবসাইটে নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকাটি প্রকাশ করা হয়।
এই সংশোধিত তালিকা অনুসারে, আগের তালিকায় থাকা প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দাকে বাদ দেওয়া হলেও এবার রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে অন্তত ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ বাঙালিকে। তাছাড়া স্বীকৃতি মিলেছে প্রায় ৯ কোটি ১১ লাখ বাসিন্দার। যদিও এই তালিকা থেকে বাদ পড়া আসামের নাগরিকদের পরবর্তী ঠিকানা ঠিক কোথায় এখন তা নিয়েই জোর আলোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে।
এ দিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে কলকাতাভিত্তিক গণমাধ্যম 'আনন্দবাজার পত্রিকা' জানায়, এরই মধ্যে নানা মহলে গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছে- চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়াদের এবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চালাবে ভারত। যদিও মার্কিন সাময়িকী 'দ্য টাইম ম্যাগাজিন' ইস্যুটিকে ভিন্নভাবে দেখছে।
গণমাধ্যমটির দাবি, আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশে পাঠানো না হলেও তাদের পরবর্তী ঠিকানা হতে পারে ভারতের অভ্যন্তরীণ বন্দি শিবির।
'টাইম ম্যাগাজিন' তাদের প্রতিবেদনে জানায়, আসাম পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণই ভারতের নিজস্ব বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেছে বাংলাদেশ। তাছাড়া জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে আগত প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সামাল দিতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, আসামের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়াদের কাছে বাংলাদেশি কোনো নাগরিকত্ব নেই; এমনকি ভারত ছাড়া আর কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব নেই তাদের। এমন অবস্থায় ভারত তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিলে মানুষগুলো একদমই রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে; যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ।
যে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই তালিকা থেকে বাদ পড়াদের নিজ দেশের ভেতরেই বন্দি বানিয়ে রাখবে ভারত। যার অংশ হিসেবে আসামে ইতোমধ্যে নতুন করে ১০টি বন্দি শিবির নির্মাণে কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। তাছাড়া অঞ্চলটিতে অতিরিক্ত ১৭ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।
অপর দিকে তালিকায় নাম না-থাকাদের এখনই তাড়িয়ে দেওয়া হবে না বলে কর্মকর্তারা বারংবার আশ্বস্ত করলেও; এর মাধ্যমে রাজ্যের সংখ্যালঘু বাঙালি বিশেষত মুসলমান জনগণকে 'উইচ হান্টিং' শিকার হতে হবে বলে আশঙ্কা পর্যবেক্ষকদের।
যদিও সংশোধিত এই তালিকা থেকে বাদ পড়া আবেদনকারীরা তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন বলে অনেক আগেই জানিয়েছেন রেজিস্টার জেনারেল অব ইন্ডিয়া শৈলেশের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, 'এনআরসির প্রতিবেদনের ফলাফলকে আপত্তি জানানোর জন্য বাসিন্দাদের পর্যাপ্ত সময় এবং যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হবে। মূলত এর পরই সরকারের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।'
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তালিকায় নাম না থাকা মানেই তারা বিদেশি নন। যে সমস্ত অধিবাসীদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে না তাদের বিদেশ ট্রাইব্যুনালে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ পাবেন। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ৬০ দিন থেকে করা হয়েছে ১২০ দিন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই এক হাজারটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। এখানে নাম নথিভুক্ত না হলে সেই ব্যক্তি দ্বারস্থ হতে পারেন হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই তালিকাভুক্ত না হওয়া ব্যক্তিকে শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হবে না। একই সঙ্গে আরও জানানো হয়েছে, জেলাস্তর থেকে আইনি সাহায্য পাবেন এই সমস্ত ব্যক্তিরা।
এসকে/আরআইএস