• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২০, ০৯:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১৬, ২০২০, ১২:২৩ এএম

‘কোভিড-১৯ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করব’

‘কোভিড-১৯ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করব’
ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ●টিভি থেকে নেয়া

সার্কভুক্ত দেশ প্রধানদের ভিডিও কনফারেন্স 

...........

কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারি মোকাবেলায় দীর্ঘ বিরতির পর এক হয়েছেন সার্ক নেতারা। একমত হয়েছেন এক সাথে কাজ করার। সংক্রমণ ঠেকাতে সার্ক দেশগুলো মিলে একটি স্বাস্থ্য সংস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এই অঞ্চলের মারাত্মক কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ‘শক্তিশালী কৌশল’ তৈরি এবং নিবিড়ভাবে পারস্পরিক সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই জনস্বাস্থ্যের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সার্কের ব্যাপক কৌশল অবলম্বন করা দরকার।

রোববার (১৫ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঠিক কর্মকৌশল গ্রহণে নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ভিডিও কনফারেন্সে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহামারি মোকাবেলার জন্য সব সার্কভুক্ত দেশগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা এবং সহায়তা করা দরকার।

তিনি বলেন, আমাদের সম্মিলিত সক্ষমতা, দক্ষতা এবং সম্পদের সাহায্যে এই সহযোগিতা তৈরি করতে হবে। 

এই অঞ্চলের মারাত্মক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সার্কভুক্ত দেশগুলোর যৌথ কর্মকৌশল নির্ধারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সার্ক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে এই ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ৮ জাতির আন্তর্জাতিক সংস্থা সার্ক গঠিত।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ডা. জাফর মীর্জা নিজ নিজ দেশের পক্ষে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন।

ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  ●টিভি থেকে নেয়া

শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ তার সক্ষমতা এবং দক্ষতা ভাগ করার জন্য প্রস্তুত।প্রয়োজনে যৌক্তিক সহায়তা প্রদান সহ সার্কের দেশগুলোর সাথে সর্বোত্তম অনুশীলনের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে যে কোনও জনস্বাস্থ্য হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও লড়াই করার জন্য বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে যে কোনও জনস্বাস্থ্য হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও লড়াইয়ের জন্য একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনারা যদি সবাই দয়া করে একমত হন তবে বাংলাদেশ এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাগতিক হতে খুশিই হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্ক দেশগুলোতে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিবিড় সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে কাজ করা দরকার।

আসুন আমরা কীভাবে আজকের বিশ্বে একে অপরের সাথে সংযুক্ত রয়েছি তা ভুলে যাব না, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যকর ভিডিও কনফারেন্সের উদ্যোগ গ্রহণ করায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান।

আমি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগের অপেক্ষায় আছি, সম্মানিত মহোদয়গণ, যেমনটি প্রয়োজন এবং আশা করি সম্মিলিতভাবেই আমরা এই মহামারি পরিস্থিতিতে আমাদের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারব বলে মন্তব্য করেন  করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের সংলাপ কারিগরি পর্যায়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব এবং প্রাসঙ্গিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এই জাতীয় ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে সহযোগিতার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালককে এই ভিডিও কনফারেন্সে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারেও বলেন মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় (পৃথক অবস্থায়) ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সাথে চীনের উহান থেকে ২৩ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে আনার এবং হোস্টিংয়ের জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে তার সরকারের পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে শক্তিশালী নজরদারি ও কঠোর চেক-আপের মাধ্যমে ভাইরাসটির প্রবেশ সফলতার সঙ্গে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে মাত্র ৩টি কোভিড-১৯ আসার ঘটনা রয়েছে (বিদেশ থেকে আক্রান্ত হয়ে আসা)। তারা এরই মধ্যে সেরে উঠেছেন। ইউরোপ থেকে আরও দুটি আক্রান্ত ব্যক্তির আগমনের (করোনাভাইরাস আক্রান্ত) ঘটনা ঘটেছে।

আমাদের এখানে কোনও কোভিড-১৯ সংক্রমণ স্থানীয় বা সম্প্রদায় পর্যায়ে ঘটেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সব স্তরের সব মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা প্রদানের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে।

তিনি বলেন, আমরা সোশ্যাল মিডিয়া সহ সব মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণাও চালাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দলের কর্মীরা সব স্তরে সচেতনতা বাড়াতে সক্রিয়, অন্যদিকে স্থানীয় সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রয়োজনে হোম কোয়ারেনটাইন (পৃথক ব্যবস্থা) প্রয়োগ করতে সচেতন।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ঢাকায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল সহ নবনির্মিত চারটি হাসপাতাল প্রস্তুত রেখেছে। রাজশাহীতেও একটি হাসপাতাল রয়েছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আমরা সব জেলা হাসপাতালগুলোতে পৃথক শয্যার ব্যবস্থা রেখেছি। 

তিনি বলেন, এমন কিছু ফাঁকা ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে প্রয়োজনে সাময়িক হাসপাতাল তৈরি করেও চিকিৎসা চলতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং স্কুলের ছেলে-মেয়েদেরকেও প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকারের কাছে টেস্টিং কিট, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, বিচ্ছিন্নতা গাউন এবং মুখোশের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের একজোট হওয়ার দিনে ১৪১টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যায়। মৃতের সংখ্যাও বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭২০ জন।

বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো এই রোগ মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেন সার্ক দেশগুলোর সরকার প্রধানরা। নিজ নিজ দেশে নেয়া কাজের অভিজ্ঞতাও বিনিময় করেন তারা।

সার্ক নেতারা এক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময়ের ওপর জোর দেন। 

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি ফান্ড’ গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে ভারত ১ কোটি ডলার দিয়ে এই তহবিলের শুরুটা করতে পারে।

এই তহবিলের অর্থ ব্যয় সমন্বয়ের কাজটি ভারতের দূতাবাসগুলো করতে পারে বলে প্রস্তাব দেন মোদী।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরে জরুরি এই পরিস্থিতিতে সার্ক নেতাদের দ্রুত উপায় খোঁজার তাগিদ দেন।

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট গনি সাংহাই করপোরেশনে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ভারতের থাকার বিষয়টি তুলে ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলায় চীনের অভিজ্ঞতা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

টেলিমেডিসিন সেবার একটি অভিন্ন রূপরেখা প্রণয়নের জন্য সার্ক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান আফগান প্রেসিডেন্ট।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জাফর মির্জা সমন্বিত কাজের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ভালোটা আশা করলেও সবচেয়ে খারাপ অবস্থার জন্য তৈরি থাকতে হবে।

শুক্রবার (১৩ মার্চ) সকালে এক টুইট বার্তায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এক সঙ্গে কাজ করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান মোদী।

তিনি বলেছিলেন, নাগরিকদের কীভাবে সুস্থ রাখা যায়, সে বিষয়ে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করতে পারি। একসঙ্গে আমরা বিশ্বের সামনে একটি উদাহরণ তৈরি করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর গ্রহ গড়ে তুলতে অবদান রাখতে পারি।

এরপর বাংলাদেশসহ সার্ক সদস্য দেশগুলো তার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেয়ার কথা জানায়। যেটি রোববার বিকালে অনুষ্ঠিত হলো।

এসএমএম