• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৮, ২০২০, ০৮:২৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৮, ২০২০, ০৮:২৫ পিএম

ভিক্ষার টাকা দিয়েও কপালে জুটেনি আনোয়ারা বেওয়ার বয়স্ক ভাতা কার্ড

ভিক্ষার টাকা দিয়েও কপালে জুটেনি আনোয়ারা বেওয়ার বয়স্ক ভাতা কার্ড
আনোয়ারা বেওয়া ● জাগরণ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ ধুমাইটারী গ্রামের মৃত আসকার আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেওয়া। পেশা ভিক্ষাবৃত্তি।
সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা আনোয়ারা বেওয়া বয়সের ভারে নুজ্ব পড়লেও এখনও তার বেঁচে থাকার একমাত্র উৎস এর ওর কাছে থেকে চেয়ে চিন্তে জীবন নির্বাহ। স্বামীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। পরিবারে আপন বলতে কেউ নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে ভিক্ষা করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।

প্রতিদিন ভিক্ষা করে যা আয় হতো তা থেকে অল্প-অল্প করে জমাতেন এই বৃদ্ধা। বয়স্কভাতার কার্ড পেতে চেয়ারম্যান-মেম্বারের দ্বারে-দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন এই নারী। কেউই তাকে ভাতার কার্ড করে দেয়নি। ঠিক সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশী আবু বকরের ছেলে আবদুর রাজ্জাক প্রস্তাব দেন ভিখারি আনোয়ারাকে। হাতের কাছে চাঁদ পেয়ে সাথে সাথেই রাজি হয়ে যান এই বৃদ্ধা। এরপর স্বপ্নের সেই বয়স্কভাতার কার্ড পাওয়ার আশায় ভিক্ষা করে জমানো ছয় হাজার টাকা তুলে দেন রাজ্জাকের হাতে। ওই পর্যন্তই এগিয়েছিল ভিখারি বৃদ্ধার বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির কার্যক্রম। এভাবেই আজ-কাল-পরশু করে কেটে গেছে জীবনের অন্তিমকালের মূল্যবান তিনটি বছর, কিন্তু অধরাই থেকে গেছে ভিখারি আনোয়ারার বয়স্কভাতা কার্ড।

জানা গেছে, শুধু আনোয়ারা বেওয়াই নন, এরকম প্রতারণার শিকার এই ইউনিয়নের শত-শত নারী-পুরুষ। বিধবা, বয়স্ক কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ভুক্তভোগীদের কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই প্রতারক চক্র।

প্রতারণার শিকার এইসব অসহায় ও দুস্থ মানুষগুলো টাকা ফেরত চাইতে গেলেও হতে হচ্ছে অপমান, অপদস্তসহ নানাবিধ  হয়রানির শিকার।

ভুক্তভোগী বৃদ্ধা আনোয়ারা বেওয়া এ প্রতিবেদককে জানান, ‘‘তিন বছর আগে ভাতার কার্ড করি দেয়ার কথা কয়া ছয় হাজার ট্যাকা নিছে রাজ্জাক। এরপর খালি ঘুরেয়। আজকে হবে, কালকে হবে, কতে কতে তিন বছর পার হয়া গ্যাচে। ট্যাকা চাবার গেলে চেয়ারম্যান-মেম্বারের কথা কয়।’’

জীবনের সূর্য অস্তমিত হয়ে আসা বৃদ্ধা আনোয়ারা বেওয়ার কন্ঠ কিছুটা ভারি হয়ে আসে। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি আরও বলেন, মুই আর কয়দিন বাচিম। ভিক্ষা করি যা জমাচনুম, সগ ট্যাকা অকেই দিচোম। মেলা দিন (৩ বছর) পর সেদিন আসাদ আর বিদ্যুৎ বাবা আসিয়ে মোর ট্যাকা উদ্ধার করি দিচে। কিন্তু মোর বয়স্ক ভাতার কার্ড এখনও হয় নাই। মোক কি দুনিয়াত দেখার মতো কেউ নাই।’’

ওই ভিখারি বৃদ্ধা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ ধুমাইটারী গ্রামের মৃত আসকার আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেওয়া।

‘কমিউনিটি অ্যাগেইনেস্ট করোনা’ গাইবান্ধা নামের একটি ফেসবুকভিত্তিক সংগঠনের পরিচালনাকারী সদস্য গোলাম শাহরিয়ার বিদ্যুৎ জানান, প্রতারক রাজ্জাকের কাছে থেকে খোয়া যাওয়া ছয় হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বৃদ্ধার বাড়িতে গ্রুপের পক্ষ হতে ১০দিনের খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তবে তার একটি বয়স্কভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো। অনেক বয়স হয়েছে, কয়দিন আর বাঁচবেন।

উপজেলা সাবেক ছাত্রলীগ যুগ্ম আহবায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, শুধু বৃদ্ধা আনোয়ারা বেওয়ায়ই নন, শত-শত নারী-পুরুষের কাছে থেকে বিধবা, বয়স্কভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ যাবতীয় সুবিধা দেয়ার কথা বলে ভুক্তভোগীদের কাছে থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক আবদুর রাজ্জাক।

উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কবির দৈনিক জাগরণকে বলেন, ওই বৃদ্ধার বাড়িতে লোক পাঠিয়ে তার কাগজপত্র আনার ব্যবস্থা করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাকে বয়স্কভাতা কার্ড করে দেয়া হবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।

এসএমএম

আরও পড়ুন