বাজারে লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। আরো এক দফা দাম বাড়ল চাল, তেল ও মুরগির। মাঝে কিছুদিন কম থাকলেও ফের দ্বিগুণ পেঁয়াজের দাম। তবে স্থিতিশীল আছে বেশির ভাগ সবজি।
শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের এমন ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। বিক্রেতারাও স্বস্তিতে নেই। পণ্যের দামের এমন ঊর্ধ্বগতির জন্য দুষছেন মিল মালিক, খামারি ও ডিস্ট্রিবিউটরদের।
চালের পাইকারি বাজারে ক্রেতারা জানান, এ সপ্তাহে ফের বেড়েছে চালের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, স্বর্ণা (পাইজাম) ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা।
এদিকে বিক্রেতারা জানান, ভারত থেকে চাল আমদানি করার পরও দাম কমছে না, বরং বাড়ছে। গত সপ্তাহেও সব ধরনের চাল ২ থেকে ৩ টাকা কম ছিল। কিন্তু এ সপ্তাহে বস্তা প্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। তাই তাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
পাইকারি চাল বিক্রেতা মোশাররফ বলেন, “ধারণা করা হয়েছিল ভারত থেকে চাল আমদানি হলে দাম কমে যাবে। কিন্তু এখন দেখছি উল্টোটা ঘটছে। কারণ আমদানি করা ভারতীয় চালের দামই বেশি।”
বিক্রেতা শাজাহান অভিযোগ করে বলেন, “মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে রেখেছে। সরকার এ বিষয়ে সুনজর দিলেই দাম কমে যাবে।”
চালের বাড়তি দামে ক্ষোভ জানান ক্রেতা মোতাহার। তিনি বলেন, “দেশটা ডাকাতে ভরে গেছে। শুধু চাল নয়, সবকিছুর দাম বেশি। সরকারের উচিত বিষয়গুলো কঠোরভাবে মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করা।”
এদিকে মাঝে কিছুদিন পেঁয়াজের দাম কম থাকলেও গত এক সপ্তাহে ফের দাম বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির। গত সপ্তাহে ২০ টাকা কেজি বিক্রি করা দেশি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। পাইকারিতে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। তবে আমদানি করা চীনা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। পাইকারিতে পাল্লা বিক্রি করা হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
এ বিষয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিনদিন ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। লোকসানের কারণে গৃহস্থরা দাম কিছুটা বাড়িয়েছে। দাম আর কমার সম্ভাবনা নেই তবে বাড়তে পারে।
মো. নূর ইসলাম নামের এক পাইকারি বিক্রেতা জানান, ২০ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি করলে গৃহস্থদের লোকসান গুনতে হয়। কারণ যখন বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা ছিল তখন তারা বাড়তি খরচ দিয়ে পেঁয়াজের চারা রোপন করেছে। এখন ২০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করলে তাদের চাষের টাকাই উঠবে না।
মাঝে দাম কেন কম ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই সময় যারা গৃহস্থের ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তুলেছে তাদের মজুরি দিতে হয়ে। পণ্য বহন করে পাঠাতে হয়েছে। তাৎক্ষণিক খরচ তুলতেই তখন কম দামে পেঁয়াজ ছেড়েছিলেন তারা।”
শুধু চাল বা পেঁয়াজ নয়, লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটছে ভোজ্যতেলের দাম। বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। অথচ তিন-চার আগেও খোলা তেলের দাম ছিল ১২৫ টাকা লিটার, পাম অয়েলের দাম ছিল ৯৫ টাকা।
এছাড়া তীর, বসুন্ধরা ও পুষ্টি ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৫৯০ থেকে ৬০০ টাকা, রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকা। তেলের এমন দামের জন্য কোম্পানি ও মিলারদেরওই দুষছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা।
তারা জানান, প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই তেলের দাম বাড়ছে। এসব দেখার কেউ নেই।
এদিকে আরো এক দফা বাড়ল মুরগির দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা, লেয়ার ১৯০ টাকা, সোনালী ২৫০ টাকা। গত সপ্তাহে এসব জাতের মুরগির দাম ছিল যথাক্রমে ১৪০ টাকা, ১৮০ টাকা, ২৪০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি হালি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৫৫ টাকা।
তবে কিছুটা স্বস্তি আছে সবজির বাজারে। বর্তমানে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা, লাউ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা, ব্রকলি ২০ টাকা ও পেঁপে ২০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি গাজর ২০ টাকা, মূলা ১০ টাকা, করলা ৩০ টাকা, বেগুন ২০ টাকা, শিম ২০ টাকা, শালগম ১০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ১০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, মটর ২৫ টাকা, মরিচ ৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতি আঁটি লালশাক বিক্রি করা হচ্ছে ১০ টাকা, লাউর শাক ১৫ টাকা, পালংশাক ৫ টাকা, পুঁইশাক ১০ টাকা, ধনিয়া ১০ টাকা, মাইরা ১০ টাকা বত্ত শাক ৫ টাকা। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১২০ টাকা, দেশি আদা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চীনের আদা ১২০ টাকা।