রমজান আসতে এখনো এক মাসের বেশি সময় বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে নিত্যপণ্যের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, নতুন জাতের পেঁয়াজ ওঠায় দাম একটু বেড়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই আবারও কমে যাবে। তবে ক্রেতারা অভিযোগ করেন, বিক্রেতারা ইচ্ছা করে দাম বাড়াচ্ছেন।
শুক্রবার (১২ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা এবং প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০ টাকা এবং পাল্লা ছিল ১৮০ টাকা।
লুৎফর নামের এক বিক্রেতা জানান, বাজারে নতুন জাতের পেঁয়াজ উঠেছে। তাই দাম একটু বেশি। তবে কয়েক দিনে মধ্যে দাম আবার কমে যাবে। প্রতিবছর রমজানে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও এবার তা হবে না। কারণ, রমজানের সময় পেঁয়াজের মৌসুম থাকবে।
তবে ক্রেতারা বলছেন, প্রতিবছর রমজান মাসে সবকিছুর দাম বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। যার প্রমাণ দেখা যাচ্ছে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যে। পেঁয়াজের দাম প্রতি সপ্তাহে বাড়ছে। রমজান আসতে আসতে এর দাম আকাশছোঁয়া হবে।
মেহেদী হাসান নামের এক ক্রেতা বলেন, “বিক্রেতারা রমজানের আগে আগে প্রতিটি পণ্যের দাম ২০-৩০ টাকা বাড়িয়ে দেয়। এরপর রমজান মাসে ৫ টাকা কমিয়ে বলে দাম কমেছে। এটাই তাদের কৌশল। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পিষ্ট হয়ে মরে শুধু মধ্যবিত্তরা।”
পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও কম আছে আলুর। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। এ ছাড়া দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, দেশি রসুন ৬০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১১০ টাকা।
তবে দাম কমেনি মুরগির। গত এক মাসের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, সোনালি ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা, লেয়ার ২০০ থেকে ২১০ টাকা, হাঁস ৫০০ টাকা, কবুতর ১৩০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, খামারিরা সিন্ডিকেট করে মুরগির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে দাম বাড়তি। রোজার ঈদের আগে মুরগির দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
মো. জিয়াউল হক নামের এক বিক্রেতা জানান, খামারিরা এবার শীতকালে কম মুরগি তুলেছে। যার প্রভাব পড়ছে এখন। আবার খামারিরা মুরগি তুললে সরবরাহ বাড়বে। তখন দামও কমে যাবে।
অন্যদিকে আগের মতোই আছে চালের বাজার। দাম কমছেও না বাড়ছেও না। বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৩ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৬ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, স্বর্ণা (পাইজাম) ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা, আটাশ ৫০ থেকে ৫২ টাকা। এ ছাড়া ভারত থেকে আমদানি করা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৫৯ টাকা।
চালের দাম না কমার বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি করা চাল কেউ কিনতে চায় না। তাই দাম কমছে না। তবে আমদানির ফলে চালের দাম এখন স্থিতিশীল আছে। আর বাড়ছে না।
শাহজাহান নামের এক বিক্রেতা বলেন, “মিল মালিকরা যদি দাম না কমান তাহলে আমরা কমাব কেমনে? তবে বৈশাখ মাসে মিনিকেট চাল উঠবে। তখন দাম নিজ থেকেই কমে যাবে।”
চালের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা এবং পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা। এছাড়া বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, রুপচাঁদা ৬১০ টাকা, পুষ্টি ৫৯০ টাকা এবং তীর ৬১০ টাকা।
এদিকে কিছুটা স্বস্তি আছে সবজির বাজারে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, কুমড়া ২৫ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ১৫ থেকে ২০ টাকা, টমেটো ১৫ টাকা, করলা ৩০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ২০ টাকা, পেঁপে ১৫ টাকা, গাজর ১৫ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, মরিচ ৩০ টাকা, কলার হালি ২০ টাকা, লেবু ৩০ টাকা।