রমজান শুরুর বাকি আর মাত্র এক মাস। পবিত্র শবেবরাতেরও বাকি আর সপ্তাহখানেক। তবু লাাগাম টানা যাচ্ছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোর। তেলের দাম যেমন বাড়ছে লিটারপ্রতি, চালের বাজারেও এখনো স্থিতিশীলতা আসেনি। গত সপ্তাহ থেকেই পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতারা ছিলেন ক্ষুব্ধ। আর এই সপ্তাহে চিনি, দুধ, গরুর মাংসসহ বেড়েছে আরও কিছু নিত্যদ্রব্যের দাম।
শুক্রবার (১৯ মার্চ) কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের মুরগির দাম আগে থেকেই বেড়েছিল। সঙ্গে বেড়েছে গরুর মাংসের দামও। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, সোনালিকা ৩৩০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর গরুর মাংস ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, শবেবরাতকে সামনে রেখে বাজারদর আরও বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা বেড়ে গেলে আর মজুত কম থাকলে জিনিসের দামেও একটু তারতম্য হবেই। এদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম ধরা হয়েছে লিটারপ্রতি ১৩৯ টাকা। যা আগের চেয়ে ৪ টাকা বেশি। যদিও বাজারে নতুন নির্ধারিত দামের তেল এখনো আসেনি।
বেড়েছে চালের দামও। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ২ থেকে ৩ টাকা বাড়তি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল চাল মানভেদে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৬ টাকা এবং বিআর ২৮ চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়।
কারওয়ান বাজারে আসা ক্রেতা জাহিদুল হক বলেন, “জিনিসের দাম সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত আমরা যারা আছি তাদের তো আয় বাড়ছে না। কিন্তু বাজারে যেকোনো অজুহাতে তেলের দাম, মুরগি দাম বাড়াচ্ছে। আগে এক মাসের চাল একেবারে কিনতাম। এখন এটাও সম্ভব হয় না।”
রাহেলা ইয়াসমিন নামের আরও এক ক্রেতা বলেন, “সরকারের ধরে দেওয়া দামেও পণ্য পেতে হিমশিম খাচ্ছি। সরকারের টিসিবি গাড়িতে যে পণ্য পাওয়া যায়, তা আরও বাড়ালে হয়তো সেখান থেকে নিতে পারব।”
এদিকে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, “মিল পর্যায়ে এখনো চালের দাম বেশি। যে কারণে বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।”
কারওয়ান বাজারে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৬৮ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়, যা এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি। একটি প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) দেখা যায় ৭৮ টাকা, যা গত মাসেও ৭৫ টাকা ছিল। জানুয়ারিতে ছিল ৭০ টাকা।
গরমে রোজায় শরবতের চাহিদা থাকায় বিক্রেতারা চিনির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে অভিযোগ করে ক্রেতা রাজীব শিকদার বলেন, “কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে গেছে। খোলা চিনি এখন ৭০ টাকা। সব জিনিসের চিত্র এমনই। এভাবে দাম বাড়ালে আমরা কীভাবে কী করব। সরকারের উচিত অহেতুক মজুত রেখে দাম বাড়ানোর এই প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু তদারকি করা।”
এদিকে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা নিয়াজ আলী বলেন, “খোলা চিনির দাম বেশি বেড়েছে। ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি কিনতে লাগছে ২৫০ টাকা। পাইকারি দোকান থেকেই ১ কেজি চিনি ৬৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। মিল্ক ভিটা লিটারে ৫ টাকা বাড়িয়েছে। নতুন দাম লিটারপ্রতি ৭৫ টাকা।”
রামপুরা থেকে আসা ক্রেতা মুসফিকুর রহমান বলেন, “সোনালিকা মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা দরে কিনতে হলো। এক সপ্তাহ আগেও এই মুরগি প্রতি কেজি কিনেছি ৩২০ টাকায়।”
স্বস্তির চিত্র কিছুটা দেখা যায় সবজির বাজারে। কয়েকটি সবজি ছাড়া প্রায় সব সবজিই সাধ্যের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তবে সজনে ডাটা এখনো কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবু হালিতে ৩০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে রোজায় এর দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ক্রেতারা।
এ ছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ১৫ থেকে ২০ টাকা, টমেটো ১৫ টাকা, করলা ৩০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ২০ টাকা, পেঁপে ১৫ টাকা, গাজর ১৫ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, মরিচ ৩০ টাকা, কলার হালি ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতি আঁটি লাউর শাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা, লাল শাক ৭ টাকা, কুমড়ার শাক ২০ টাকা, পালং শাক ৭ টাকা, মাইরার শাক ১০ টাকা, কলমির শাক ১২ টাকা এবং ধনিয়া ১০ টাকা।