• ঢাকা
  • শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৪, ২০২১, ০৯:৫৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৪, ২০২১, ০৯:৫৪ এএম

ইলিশ ছাড়া বৈশাখ

ইলিশ ছাড়া বৈশাখ

দরজায় কড়া নাড়ছে বৈশাখ। পয়লা বৈশাখ বাঙালির উৎসব, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অংশ। এর অনুষঙ্গ হিসেবে যোগ হয় সাদা-লাল পোশাক আর পান্তা ভাতের সঙ্গে ভর্তা ও ভাজা ইলিশ। যদিও বাঙালি নিজেরাই নববর্ষ উদযাপনে জুড়ে নিয়েছে এই অনুষঙ্গগুলো। পাতে ইলিশ না হলে যেন তৃপ্তিই মেটে না বাঙালির।

পয়লা বৈশাখ এলেই হিড়িক পড়ে ইলিশ কেনার। অথচ ইলিশের প্রজননকাল এই বৈশাখ। প্রতিবছর কয়েক দফা জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হয় ইলিশ নিধন রোধে। তবু যেন রেহাই নেই। কোনো না কোনোভাবেই ইলিশ ধরছে এবং বাঙালি তা দিয়ে বৈশাখও উদযাপন করছে।

এ বছরের চিত্রটা যদিও ভিন্ন। করোনা মহামারিতে অবরুদ্ধ চারপাশে বৈশাখ উদযাপনও খানিকটা ফিকে পড়ে গেছে। সেই সঙ্গে ইলিশ কেনায়ও নেই ক্রেতাদের ভিড়। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় ইলিশ নিধনে থেমে নেই। উচ্চ মূল্যে ইলিশ বিক্রির লক্ষ্যে চোখের আড়ালেই চলছে ইলিশ নিধন। যদিও এই বছর ক্রেতাদের কাছে ইলিশ পৌঁছে দেওয়াটা কষ্টসাধ্য। 

পাতে ইলিশ থাকছে না, তাই বলে কি বৈশাখ হবে না? পয়লা বৈশাখ উদযাপনও হবে, বাঙালিরাও এই উৎসবে মেতে উঠবেন। করোনা আতঙ্ক থাকলেও, ঘরেই হবে এবার বৈশাখী উদযাপন। ইলিশ না হলেও বাঙালির পাতে থাকবে রুই, কাতলাসহ নানা মাছের আয়োজন। হবে মাছ দিয়ে তৈরি নানা স্বাদের নানা পদ।

‘বৈশাখে ইলিশের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির সম্পর্ক নেই’ এমন কথাই জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের অনেকেই জানান, গ্রামবাংলায় পয়লা বৈশাখের আয়োজনে থাকত আগের দিন ভিজিয়ে রাখা চাল। ওই চালের পানি কৃষক খেতেন। মঙ্গলের জন্য কিষানি কৃষকের শরীরে ছিটিয়ে দিতেন। তারা পান্তাও খেতেন। এর সঙ্গে থাকত কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, শুঁটকিভর্তা, বেগুনভর্তা।

বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ থেকেও জানা যায় ইলিশের সঙ্গে বৈশাখেরও  দূরদূরান্তে নেই কোনো সম্পর্ক। বৈশাখ নিয়ে লেখা বইয়ে উল্লেখ করা হয়, পয়লা বৈশাখে গ্রামের অবস্থাপন্ন এবং ধনী পরিবারে খাবারের আয়োজন করা হতো। আয়োজনে রাখা হতো চিড়া, মুড়ি, সাধারণ খই, বিভিন্ন ধানের খই, দই, খেজুরের গুড়, খিচুড়ি। আর মাছের মধ্যে থাকত বড় কই মাছ, বড় রুই মাছ।

সকালের নাশতা থেকেই শুরু হতো এই আয়োজন। চিড়া, মুড়ি, খই, লুচি, দই, খেজুর গুড় দিয়ে শুরু হতো বৈশাখের ভোর। দুপুরে খাবারের আয়োজনে থাকত খিচুড়ি এবং বড় কই ভাজা, বড় রুই মাছের পেটি ভাজা, বড় পুঁটি মাছ ভাজা। বিভিন্ন ধরনের ভাজিও রাখা হতো ওই আয়োজনে। এমন খাবার রাখা থাকত রাতেও। এই আয়োজনেই গ্রাম বাংলার মানুষ মেতে উঠতেন বৈশাখী আনন্দে।

আরও পড়ুন