
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুও বাড়ছে। চিকিৎসার অভাবে করোনা রোগীরা মারা যাচ্ছেন। রেকর্ডের পর রেকর্ড ভাঙছে মৃত্যু। হাসপাতালে শয্যা নেই। ধারণক্ষমতার তিন থেকে চার গুণ রোগীর ভিড়। অক্সিজেন নেই। দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকেও মিলছে না আইসিইউ। সব মিলিয়ে করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর অর্ধেকই হয়েছে ঢাকায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া মৃতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৫৮ দশমিক শূন্য ৭ ভাগ মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ চট্টগ্রামে, ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ রাজশাহীতে, ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ খুলনায়, ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ বরিশালে, ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ সিলেটে, ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ রংপুরে এবং ২ দশমিক ১০ শতাংশ ময়মনসিংহে।
ঢাকায় করোনায় মৃত্যুর হার বাড়ার পেছনে গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, “ঢাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। কিছুদিন আগে এখানে গণপরিবহন, বাজার চালু ছিল। এখন গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বাজার খোলা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গণপরিবহন ও বাজার থেকে করেনো বেশি ছড়ায়। অথচ এসব জায়গায় মানুষ সব থেকে অসচেতনভাবে চলাফেরা করেন। ফলে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর যারা একটু বয়স্ক তাদের আরও বেশি করোনা কাবু করে ফেলছে।”
ডা. লেলিন আরও বলেন, “দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর অর্ধেকই হচ্ছে ঢাকায়। রাজধানীর বাসিন্দাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসা নিতে এসে তাদের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে যারা যাচ্ছেন তারা একেবারে ‘বেশি সমস্যা’ নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই শেষ পর্যায়ে হাজির হচ্ছে হাসপাতালে, এ কারণে তাদের বাঁচানো যাচ্ছে না।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, “করোনা শুরু থেকে আমরা দেখতে পারছি বয়স্ক মানুষ বেশি মারা যাচ্ছেন। বয়স্ক মানুষের বিভিন্ন রকম রোগ থাকে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকেন বেশি। ক্যানসার ও হৃদরোগসহ যারা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত থাকেন তাদের জন্য করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বেশি।”
অতি সংকটাপন্ন রোগী ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) পাচ্ছেন না। এতে করে রোগী রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতেই মারা যান। ডা. বে-নজির আরও বলেন, “করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আইসিইউ সংকট প্রবল। বলা যায় হাহাকার চলছে। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে মিলছে না আইসিইউ। পথেই মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। কেউ কেউ দুই-তিন দিন অপেক্ষায় থেকে গভীর রাতে সংকটাপন্ন রোগী নিয়ে সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে নামসর্বস্ব বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন আইসিইউর জন্য। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি করোনা হাসপাতালগুলোয় সাধারণ শয্যার সঙ্গে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা যুক্ত করে আইসিইউ সংকট মেটানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না।”
ডা. বে-নজির জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আমাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ঢাকা শহরের চিত্রটা দেখলেই সেটা সহজে অনুমান করা যায়। সবকিছু খুলে দেওয়ার পর সবাই যেন ধরেই নিয়েছিলেন, করোনা চলে গেছে। করোনা যে সহজে যাবে না, সেটা আরও সিরিয়াসভাবে নেওয়া উচিত ছিল।
যে হারে করোনা রোগী বাড়ছে তাতে চিকিৎসাসেবা ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। মৃত্যু আরও বাড়তে থাকবে। চিকিৎসার অভাবে রোগীরা মারা যাবে। তাই সবার স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মানাতে হবে। এ ব্যাপারে কঠোর থেকে কঠোরতর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।