করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আশঙ্কাজনক হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। তবে সংক্রমণটা আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও এরই মধ্যে নতুন ধরন ও মিউটেশনে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, যা বাতাসেও ছড়াচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, লকডাউনের আগে কিছুদিন বেপরোয়া চলাচলের কারণে সংক্রমণটা বেড়েছে। লকডাউনে কঠোর হওয়ায় সংক্রমণ আগের চেয়ে কমেছে। মৃত্যুর সংখ্যাও কমে আসবে বলে তারা আশা করছেন।
এদিকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সীমিত বিধিনিষেধ জারি করেছিল সরকার। জারি করেছিল ১৮ দফা নির্দেশনা। তবে তা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। পরে ১৪ এপ্রিল থেকে ৮ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবধরনের গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়। দোকানপাটসহ শপিংমল বন্ধেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। যদিও খোলা রাখা হয়েছে পোশাক কারখানা।
সেই কঠোর বিধিনিষেধের শেষ দিন বুধবার (২১ এপ্রিল)। যদিও তার আগেই এই বিধিনিষেধ বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু কেমন ছিল সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম পর্যায়? করোনা প্রতিরোধে কতটুকু কার্যকর হয়েছে তা? মানুষই-বা কতটা সাড়া দিয়েছে এই লকডাউনে?
দেখা গেছে, বিধিনিষেধ ঘোষণার পর প্রথম দুই-তিনদিন কঠোরই ছিল। রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ তৎপরতাও চোখে পড়ে। তবে দিন যত গড়িয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ ততোই শিথিল হয়েছে। রাজধানীতে লকডাউন নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন কোনো সচেতনতা বা আগ্রহ দেখা যায়নি। সারা দেশের চিত্রও প্রায় একই রকম।
অন্যদিকে বিধিনিষেধ অনেকটা শিথিল দেখা গেছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ব্যাপকহারে দেখা গেছে মানুষ ও যানবাহনের চাপ। রাজধানীতে পাবলিক গাড়ি না চললেও প্রাইভেট গাড়ির চাপ বেড়েছে। কোথাও কোথাও যানজটও লক্ষ করা গেছে। মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা গেলেও তারা কেমন একটা কড়াকড়ি দিচ্ছেন না। এদিকে পুলিশ এলে দোকান বন্ধ করে আবার পুলিশ চলে গেলে দোকান খুলে ফেলেন ব্যবসায়ীরা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোও।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১৮টি নির্দেশনা দেওয়া হলেও তাতে বেশিরভাগ মানুষের অনীহা দেখা গেছে। শুধুমাত্র মাস্ক ছাড়া সামাজিক দূরত্বসহ অন্যগুলো তেমন একটা মানতে দেখা যায়নি। মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগই থুতনির ওপর মাস্ক ঝুলিয়ে রেখেছে। লকডাউন নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের আছে অনীহা।
রাজধানীর টাউন হল বাজারের কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, “সরকার লকডাউন দিয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু মানুষ নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নেওয়ার জন্য কি বাজারে আসবে না? বেচাবিক্রি না করতে পারলে আমরা চলবো কীভাবে?”
করোনায় সাধারণ মানুষ বেশি অসুবিধায় পড়ছেন গবেষকদের ধারণা। ক্ষুদ্র যানবাহন চালক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবি, “পেটে ক্ষুধা রেখে কিসের লকডাউন? মরলে খেয়ে মরবো।”
মোহাম্মদপুর এলাকার শাহীন নামে এক স্যানিটারি ব্যবসায়ী বলেন, “একদিকে রোজা, সামনে ঈদ। মানুষ কতো ঘরে বসে থাকবে? পেটে ভাত না থাকলে লকডাউন দিয়ে কী হবে? লকডাউন না দিয়ে খুলে দিলে ভালো হয়।”
লকডাউনে বিষয়ে রাজনীতির মাঠেও চলছে আলোচনা। এ বিষয়ে নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদী বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী দয়া করে আপনার স্বাস্থ্য-স্বরাষ্ট্র-খাদ্যমন্ত্রী ও সচিবদের প্রস্তাবিত খেয়ালি লকডাউন বন্ধ করে মানুষ বাঁচান, দেশ বাঁচান। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বাড়ি ভাড়া-পরিবারের ভরণপোষণ করতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করছে। সাধারণ মানুষের আর্তনাদ শুনুন।”