• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২১, ০৫:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৭, ২০২১, ০৫:৪৬ পিএম

পর্ব-১

বাংলাদেশে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

বাংলাদেশে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

সম্প্রতি বাংলাদেশে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে’ (কালো ছত্রাক) আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে। এছাড়া এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও কয়েকজন একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইংরেজিতে রোগটির নাম মিউকরমাইকোসিস। তবে পরীক্ষার আগে এই ছত্রাকটির বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তবু করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেই দেশে এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন আতঙ্ক। পাশাপাশি করোনার ভারতীয় ধরনের রোগীও দিন দিন বেড়েছে। আতঙ্কের মধ্যে আরও বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে সেটি।

রাজশাহী, সিলেট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি জেলা ভারতীয় ধরনের সংখ্যা বেড়েছে। এরই মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাত দিনের বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই ছত্রাকটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮০০ জন ফাঙ্গাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে নতুন এক তথ্য বেরিয়েছে দেশটিতে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ও হোয়াইট ফাঙ্গাসের সংক্রমণের পাশাপাশি ইয়েলো বা হলুদ ফাঙ্গাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বাংলাদেশে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, রোগটির ধরনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কয়েকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞর সঙ্গে কথা হয় জাগরণ অনলাইনের। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছোঁয়াচে নয়। এটি নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকাটা জরুরি। তাদের মতে, এ ছত্রাকবাহিত রোগ বাংলাদেশে আগেও হয়েছে। ছত্রাকটি প্রকৃতির সর্বত্র আছে। রোগ প্রতিরোধ কমে গেছে, এমন ব্যক্তিদের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রোগটির ধরন ও লক্ষণ সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী জাগরণকে বলেন, “ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হলে সাধারণত নাকের একটা পাশ বন্ধ হয়ে যায়, নাক দিয়ে কালো রক্ত বের হয়, একটা অংশ ফুলে যায়, চোখে ব্যথা করে, মুখ চোয়াল নাড়াতে কষ্ট হয়। চামড়া থেকে চামড়ায় জ্বালা ও খসখসে হয়ে যায়।”

কাদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি—জানতে চাইলে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “মানুষের শরীরে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না, যারা হার্টের রোগী বা ক্যানসারে আক্রান্ত, তাদের এটা হয়। এমনিতে আমাদের চারপাশের পরিবেশে সেটি বাতাসে ভেসে ভেড়ায়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, তাদের এটা আক্রান্ত করবে না। যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা হার্টের সমস্যা আছে, যারা ক্যানসারে আক্রান্ত, অপরিচ্ছন্ন মাস্ক অথবা একটি মাস্ক দীর্ঘদিন পরার মতো বদভ্যাস যাদের আছে, তারা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের শরীরে এটা দেখা দেয়।”

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কীভাবে ছড়ায় জানতে চাইলে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম সেন জাগরণকে বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসটা সাধারণ পরিবেশেই অবস্থান করে। মাটি, পানি এসবের মধ্যে থাকে। করোনার সঙ্গে এটা সম্পর্কটা হচ্ছে, যখন কেউ করোনায় আক্রান্ত হয় তখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটা কমে যায়। তখন এটায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এভাবে করোনা রোগীর এটা হতে পারে।

ডা. গৌতম আরও বলেন, এটা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না, প্রকৃতি থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। যেসব এলাকার মাটি বা পানিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থাকে সেসব এলাকার মানুষের মধ্যে এটা হতে পারে।

একই কথা বলেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ। জাগরণকে তিনি বলেন, “ছত্রাকটি আমাদের আশপাশের প্রকৃতিতেই বাস করে। মাটি বা বাতাসে অন্যান্য ছত্রাকের মতো এই ছত্রাকটিও থাকে। মানুষের শরীরে সেটি নানাভাবেই প্রবেশ করতে পারে। কোনো গহিন জঙ্গলে বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা থেকেও সেটি দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে কেউ। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাদের ক্ষেত্রে সাধারণত সংক্রমণটা ঘটে।”

বাংলাদেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, সে বিষয়ে ডা. বে-নজির বলেন, “ভারতে করোনা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে অনেকে মারা গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে করোনা রোগী কম হওয়ায়, তা সেভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। ভারতে এটা নিয়ে জরুরি অবস্থা চলছে। আমাদের এখানে এটা তেমন কিছু না। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ নয়।”

ডা. বে-নজির আরও বলেন, “ভারতের মতো বাংলাদেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে এত খারাপ পরিস্থিতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমার ধারণা, ভারতে শিল্পকারখানার অক্সিজেন ব্যবহার হয়েছে। তা থেকে এ সংক্রমণটা হয়েছে।”

বাংলাদেশে ব্লাক ফাঙ্গাস আলাদা কিছু নয় উল্লেখ করে ডা. বে-নজির আরও বলেন, “করোনা হলে তারপর এই লক্ষণ দেখা দেয়। রোগটা আগেও ছিল। করোনা আসার আগে এটা কম দেখা যেত, করোনার কারণে এখন বেশি দেখা যাচ্ছে।”

করোনা ছাড়া কি এমনিতে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে কি না, তা জানতে চাইলে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম বলেন, “হতে পারে। যদি কারও আগে থেকে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে বা যেসব অসুখের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বা যারা বয়স্ক—তাদের হতে পারে।”

বাংলাদেশে রোগটির ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তেমন একটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এ দেশের ক্ষেত্রে ভয়ানক হচ্ছে, বাংলাদেশে যদি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে পারে।”