ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে না আসতেই তেতে উঠেছে তেলের বাজার। খোলা অথবা ব্র্যান্ড, দাম বেড়েছে সব ধরনের সয়াবিন তেলের। বিক্রেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায়, দেশের বাজারেও বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের দাবি, সরকারের যথাযথ তদারকির অভাবে এই অস্থিরতা।
শুক্রবার (২৮ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম বাড়ানোর পর নতুন লটের তেল এখনো বাজারে আসেনি। তবে ইতোমধ্যে সব ধরনের সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।
বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬৭০ টাকা, পুষ্টি ৬৫০ টাকা, বসুন্ধরা ৬৬০ টাকা, ফ্রেশ ৬৫০ টাকা, তীর ৬৬০ টাকা। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকা এবং পাম বিক্রি হচ্ছে ১১২ টাকা।
তেলের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিক্রেতারা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় মিল ও কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়েছে। তারা শুধু কোম্পানি থেকে কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন। কোম্পানি তাদের যে দামে দেবে, তারা সেই দামেই বিক্রি করবেন। সামনে ভোজ্যতেলের দাম ৭০০ টাকা ওপর হবে বলেও জানান তারা।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, সরকারের যথাযথ তদারকি না থাকায় যে যার মতো দাম বাড়ায়। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। আর শুক্রবার সকালে দাম বেড়েছে। অথচ নতুন তেল এখনো বাজারে আসেনি।
কবির হোসেন নামের এক ক্রেতা ব্যঙ্গ করে বলেন, “আমরা উন্নত দেশে পরিণত হচ্ছি সবকিছুর দাম তো বাড়বেই। সরকারের উচিত তেল ছাড়া রান্নার পদ্ধতি বের করা। কারণ, যেভাবে দাম বাড়ছে, কদিন পর সত্যি সত্যি তেল ছাড়া রান্না করতে হবে।”
পিছিয়ে নেই পেঁয়াজও। তেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে এই নিত্যপণ্যটির। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা। আর পাইকারি বাজারে পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। অথচ গত সপ্তাহেই খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০ টাকা, পাইকারি বাজারে পাল্লা ১৮০ টাকা।
হযরত আলী নামের এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, “ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি নেই। আমাদের দেশে যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। যার কারণে দাম বাড়ছে।”
সম্পদ আলী নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, “প্রতিদিন দুই টাকা করে পেঁয়াজের দাম বাড়ে। গত সপ্তাহে প্রতি পাল্লা পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১৮০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাল্লা হয়েছে ২২০ টাকা।”
সামনে আরও দাম বাড়বে বলে জানান খালেক নামের আরেক বিক্রেতা।
পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতারা। তারা বলেন, বিক্রেতারা শুধু দাম বাড়ানোর জন্য অজুহাত খোঁজে। কখনো আমদানি নেই, কখনো উৎপাদন নেই, কখনো চাহিদা বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোটাই তাদের কাজ।
তেল ও পেঁয়াজের বাজার অস্থির হলেও, কিছুটা শান্তি আছে চালে। বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, স্বর্ণা (পাইজাম) ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) ৪০ থেকে ৪২ টাকা এবং আটাশ ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা।
স্বস্তি আছে সবজিতেও। বর্তমানে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটোল ৩০ টাকা, ধুন্দল ২০ টাকা, ঝিঙে ২০ থেকে ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কাকরোল ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, লতি ৪০ টাকা, মরিচ ৩০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা। এছাড়া প্রতি পিস কুমড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা, চাল কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ২০ টাকা, লেবুর হালি ২০ টাকা।
আগের মতোই আছে আলু, রসুন, আদা, ডিমের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, দেশি রসুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চীনা আদা ১২০ টাকা এবং দেশি আদা ৮০ টাকা। প্রতি হালি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪০ টাকা।