দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাতটি জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। তবে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগামী অবস্থায় সারাদেশে আবারও লকডাউন ঘোষণা হতে পারে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, সারাদেশে আপাতত লকডাউন নয়। তবে পরিস্থিতি যদি নাজুক হয় এবং প্রতিটি জেলায় যদি সংক্রমণ ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়, তাহলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বুধবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত করোনা বুলেটিনে এ কথা বলেছেন অধিদফতরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
তিনি বলেন, আমরা আপাতত ঢাকার পার্শ্ববর্তী ৭ জেলার সংক্রমণ পরিস্থিতি দেখছি। যদি সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি এবং ঢাকার পরিস্থিতি নাজুক হয় তাহলে শুরুতে ঢাকাকে লকডাউনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া যদি ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে সারাদেশে লকডাউনের কোনো প্রয়োজন হবে বলে মনে করি না।
রোবেদ আমিন বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকায় সংক্রমণের হার এতোটা বাড়েনি। তবে যেকোনো সময় এটি বেড়ে যেতে পারে। আমরা আশা করছি ঢাকার আশপাশের সাতটি জেলায় যদি লকডাউন সফল হয় এবং আমরা যদি মানুষের যাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে রাজধানী বা সারাদেশে লকডাউন প্রয়োজন হবে না।
‘বিচ্ছিন্ন’ ঢাকায় জনসমাগম বন্ধের সুপারিশ
সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণায় ঢাকাকে করোনার ভয়াবহ প্রকোপ থেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো লকডাউনের আওতায় আনায় আশা করি ভালো একটা সুফল মিলবে। ওই জেলাগুলো থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় চলাফেরা করতে না পারেন, তাহলে সারাদেশে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করবে। এক্ষেত্রে লকডাউন ঘোষিত জেলাগুলোতে আক্রান্তদের শনাক্ত করে তাদের আইসোলেশনে রাখতে হবে।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চাইছে সরকার
তিনি বলেন, ঢাকায় হয়তো লকডাউনের দরকার নেই, কিন্তু খুবই কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত। যেমন-সন্ধ্যার পর সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করা; রেস্টুরেন্ট, টি-স্টলসহ বিভিন্ন স্থানের আড্ডা বন্ধ করা; একইসঙ্গে কনভেনশন সেন্টারগুলোতে বিয়ে থেকে শুরু করে যত ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়, তা আপাতত স্থগিত করা।
আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, আমাদের এখানে যত রোগী শনাক্ত হবে তাদের আইসোলেশনে রাখতে হবে। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রান্সমিশনের চেইনটা ভাঙতে না পারি ততক্ষণ সংক্রমণ হতেই থাকবে। সামনে কোরবানির ঈদ। এ উপলক্ষে পশুর হাটগুলোতে খুব কড়াকড়ি আরোপ করা উচিত। আমাদের মেয়রদের এসব বিষয়ে আরও সক্রিয় হতে হবে। এখন ঢাকায় সংক্রমণ কম, তাই বলে সংক্রমণ যে বাড়বে না এমন ধারণা করা ভুল।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে দেশের ৭ জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন (বুধবার) রাত ১২টা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এই ৯ দিন এসব জেলা একরকম ‘ব্লকড’ থাকবে।
জাগরণ/এসকে