• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২১, ০৮:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৪, ২০২১, ০৮:৩০ পিএম

গৃহকর্ত্রীর নির্মম নির্যাতনের শিকার ১১ বছরের শিশু আকলিমা

গৃহকর্ত্রীর নির্মম নির্যাতনের শিকার ১১ বছরের শিশু আকলিমা
নির্যাতনের শিকার শিশু আকলিমা। ছবি- জাগরণ।

ঢাকার মিরপুর-২ এলাকার একটি বাসায় লিপি খাতুন নামে পাষণ্ড এক গৃহকর্ত্রীর নির্মম নির্যতানের শিকার হয়ে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মাগুরা সদর উপজেলার বাহার বাগ গ্রামের আকলিমা নামের ১১ বছরের এক শিশু। দীর্ঘ আঠারো মাস বাড়িতে বন্দী রেখে তাকে নির্মম পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তার ওপর। এমনকি বঞ্চিত করা হয়েছে নূন্যতম খাদ্যের অধিকার থেকে। যা তাকে করেছে রোগাক্রান্ত ও হাড্ডিসার। 

মাগুরা সদর উপজেলার বাহারবাগ গ্রামের কুবাদ শেখের মেয়ে এই আকলিমা। ঢাকার মিরপুর-২ এলাকায় মাসুদুর রহমান বাবু নামে এক ব্যক্তির ভাড়া বাড়িতে গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করার সময় গত ১৮ মাস ধরে বাবুর স্ত্রী লিপি খাতুনের এই নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে সে। পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নির্যাতিতাসহ অভিযুক্ত লিপি খাতুন ও তার স্বামী বুধবার  মাগুরায় আসে। আকলিমার স্বজনরা বৃহস্পতিবার আকলিমার সাথে দেখা করে তার কঙ্কালসার ও অসুস্থ অবস্থা দেখে একই দিন বিকালে মাগুরা ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করেন। আকলিমার মুখে জানতে পারেন নির্যাতনের ওইসব বর্ণনা। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সদর থানা পুলিশ মাগুরা শহরের কলেজ পাড়ায় আকলিমার গৃহকর্তা মাসুদুর রহমান বাবুর নিজ বাসা থেকে লিপি খাতুনকে আটক করেছে। অন্যদিকে বাবু পলাতক রয়েছে। বাবু একটি ওষুধ কোম্পানীতে ঢাকায় কর্মরত। মাসুদুর রহমান ও লিপি খাতুনের বিরুদ্ধে মাগুরা সদর থানায় আকলিমার দাদা তজলু শেখ মামলা দিয়েছেন। 

শিশুটির দাদি মনোয়ারা বেগম জানান, বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর থেকে মাগুরা সদরের বাহারবাগ গ্রামে দাদা তজলু শেখ ও দাদি মনোয়ারা বেগমের কাছেই থাকছিলো আকলিমা। পড়তো স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়। এরই মধ্যে অভাবের সুযোগ নিয়ে বাহারবাগের গ্রাম্য প্রতিবেশী মাসুদুর রহমান বাবু ও তার স্ত্রী লিপি খাতুন আকলিমাকে তাদের ঢাকার বাসায় শিশুপুত্রকে দেখা শোনার জন্য প্রস্তাব দেয়। মাসিক পারিশ্রমিক ১ হাজার টাকা। সঙ্গে থাকা খাওয়া। রাজি হয়ে যান আকলিমার দাদা দাদি। বাবু ও লিপি দম্পতি  আকলিমাকে প্রথমে নিয়ে আসে মাগুরা শহরের কলেজ পাড়ার বাসায়। পরে কর্মসূত্রে আকলিমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মিরপুর-২ এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। সেখানেই বাবুর স্ত্রী লিপি খাতুন গত আঠারো মাস ধরে চালিয়েছে এই নির্মম নির্যাতন। আকলিমাকে লিপি খাতুন হেন কোনও নির্যাতন নেই যা করেনি। ধারালো সুচ, খুনতি, পেন্সিল, কলমের খোচা ও ছ্যাকা পর্যন্ত দিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে চড়, লাথি, বেত্রাঘাত ছিলো নিত্য দিনের ঘটনা। শুধু তাই নয় তাকে তিন বেলা খাবার পর্যন্ত দেয়া হয়নি। যা দেয়া হতো তা বাসি ও পচা। নানা এ দুরাবস্থার মধ্যে পড়ে দীর্ঘ দিনের অপুষ্টিতে কঙ্কালসার দেহ নিয়ে শয্যাশায়ি হয়ে গেছে আকলিমা। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
 

মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রফিকুল আহসান জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে শিশুটি ভর্তির সময় তার শরীরে একাধিক নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। কিছু চিহ্ন গরম কিছুর ছ্যাকা জাতীয়। সবচেয়ে বড় কথা দীর্ঘদিনের অপুষ্টিতে তার শরীর কঙ্কালসার হয়ে গেছে। তাকে সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া হবে।
 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত লিপির স্বামী বাবু বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘শিশুটির দাদা তজলু শেখর মামলার ভিত্তিতে বাবুর স্ত্রীকে লিপি খাতুনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। বাবুকে আটকের চেষ্টা চলছে।' 

 

এসকেএইচ//