• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২২, ০১:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৯, ২০২২, ০১:০৮ পিএম

বৈদ্যপাড়ায় নারীর মৃত্যুর কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ

বৈদ্যপাড়ায় নারীর মৃত্যুর কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ

বরিশাল নগরীর বৈদ্যপাড়া এলাকা থেকে সাদিয়া আক্তার সাথী (২৪) নামে এক নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার নিয়ে চলছে আলোচনা। ঘটনার দুইদিন অতিবাহিত হলেও সাদিয়ার মৃত্যুর কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ। হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটাও নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত।

সোমবার (৭ মার্চ) দুপুরে নগরীর বৈদ্যপাড়ায় একটি ভবনের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় সাদিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ। এরআগে সকালে একমাত্র সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসেন তিনি। নিহত সাদিয়া বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভুতের দিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে।

সাদিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা। ওই নারীকে তার স্বামী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল মাইনুল ইসলাম হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সেই অভিযোগ লিখিত আকারে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) কোতোয়ালি মডেল থানায় জমা দিয়েছেন সাদিয়ার বাবা সিরাজুল হক মৃধা।

তিনি জানান, তার মেয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থী ছিলেন। তার আগের সংসারে ৮ বছরের সন্তান আছে। প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের কথা গোপন রেখে সাদিয়াকে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেন মাইনুল। বরিশালেই বাসা ভাড়া করে থাকতেন তারা। পরে সাদিয়া সাবলেটে থাকতে শুরু করেন। তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়েছেন মাইনুল। সেই টাকা ফেরত চাইলে নির্যাতন করা হতো। মাইনুলের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর বাদুরী গ্রামে।

সিরাজুল হক অভিযোগ করেছেন, সাদিয়া আত্মহত্যা করলে ওর ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে আটকানো থাকার কথা। পুলিশ এবং আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা খোলা পেয়েছি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তা স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়। আমি চাই আমার মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। যদি আত্মহত্যা করত, তাহলে তার সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসতো কেন? আমার ধারণা, সাইমুনকে স্কুলে দিয়ে এসে বাসায় একা ছিল সাদিয়া। তখন তাকে নির্যাতন করে মারধর করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখেছে মাইনুল।

সাদিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে লাপাত্তা মাইনুল। সাদিয়ার সঙ্গে স্বর্ণালী নামে একটা মেয়ে সাবলেটে থাকত। ঘটনার পর তাকেও খুঁজে পাচ্ছি না। পুলিশ চেষ্টা করলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করতে পারে।

সাদিয়ার দুলাভাই বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী বলেন, সাদিয়ার আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই। কিছুদিন আগে ব্যাংকে চাকরি দেয়ার কথা বলে মাইনুল ১৩ লাখ টাকা নেয়। পরীক্ষা দেয়ার পরে চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চায় সাথী। প্রথম অবস্থায় ৮ লাখ টাকা ফেরত দিলেও বাকি ৫ লাখ টাকা ফেরত দেন না। পরে ৫০ লাখ টাকা যৌতুকও দাবি করেন মাইনুল। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। হত্যার আগের দিন রোববার মাইনুল বাসায় এসেছিল। সাদিয়ার মেয়ে সাইমুন আমাদের জানিয়েছে, মাইনুল এসে ঝগড়া করে এবং সাদিয়াকে মারধর করে। তাছাড়া মাইনুলই আমাদের সবাইকে কল করে জানায় সাদিয়া আত্মহত্যা করেছে। আমরা চাই ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক। মরদেহ উদ্ধারের সময়ে কোতোয়ালি থানার এসআই সাদিয়ার লেখা একটি ডায়েরি, মোবাইলফোন নিয়ে গেছেন। সেগুলোতে কী আছে তা আমরা দেখতে চেয়েছি, তা কিছুই দেখায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাইনুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মরদেহ উদ্ধারকারী উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি সাদিয়ার স্বামী চাকরি করেন। কী চাকরি করেন তা জানতে পারিনি। তবে মঙ্গলবার সকালে জানতে পেরেছি মাইনুল ইসলাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করে।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম জানান, সাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তার পরিবারের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জাগরণ/আরকে