• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২২, ০৮:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৬, ২০২২, ০৮:৫০ পিএম

ঈদ সামনে রেখে সক্রিয় কালোবাজারি চক্র

ঈদ সামনে রেখে সক্রিয় কালোবাজারি চক্র
রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে শনিবার টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। ছবি : জাগরণ

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাস, ট্রেন ও লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। প্রায় একই সময়ে লঞ্চ টার্মিনালে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। এই অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে কালোবাজারিরা। কাউন্টারগুলোতে টিকিট পাওয়া যায় না। অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে কয়েক গুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে কালোবাজারিরা। কালোবাজারে টিকিট বিক্রি ঠেকাতে এবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে ঢাকার পুলিশ কমিশনার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করে টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার হারুণ অর রশিদ বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষ যাতে টিকেট কালোবাজারির খপ্পরে না পড়ে সেজন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। বাস, লঞ্চ ও রেল স্টেশনে আমরা নজরদারি রাখছি। এছাড়া অনলাইনে আমাদের নজরদারি রয়েছে। কেউ যাতে কালোবাজারি টিকিট অনলাইনে বিক্রি করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদুল ফিতর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। আপনজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে ঢাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে রওনা দেয়। ঘরমুখো মানুষের চাপে বাস, ট্রেন এবং লঞ্চের টিকিটের চাহিদা বেড়ে যায়। সাধারণত লক্ষ করা যায়, টিকিটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী কালোবাজারিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে টিকিট সংগ্রহ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে কালোবাজারিরা কৌশলে এসব টিকিট বিভিন্নভাবে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করে।

জানা গেছে, সবচেয়ে টিকিট কালোবাজারি বেশি হয়ে রেলওয়ে স্টেশনে। সড়কে যানজট ও নির্মাণ কাজ চলার কারণে যাত্রীরা বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। রেলের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় সারাবছরই স্টেশনগুলোকে কেন্দ্র করে কালোবাজারিরা সক্রিয় থাকে। ঈদের সময় এই চক্র আরও বেশি সক্রিয় হয়। যদিও চলতি বছর রেল কর্তৃপক্ষ রেলের টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানোকে বাধ্যতামূলক করেছেন।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, টিকিট কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে খোদ রেলওয়ের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে। তারাই কৌশলে টিকিট সংগ্রহ করে কালোবাজারিদের হাতে তুলে দেয়। গত ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে টিকিট কালোবাজারি চক্রের দুই সদস্যকে আটকের পর তারা জানায়, খোদ রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই তাদের টিকিট বিক্রির জন্য দেয়।

এদিকে, ঈদে যাত্রী পরিবহনের জন্য বিশেষ সার্ভিস ছাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী ২২টি বিলাসবহুল এবং বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের ৩৫টি মিলে মোট ৫৭টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে আরও লঞ্চ যুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ সার্ভিস যাত্রীচাপের ওপর ভিত্তি করে ঈদের পর সাত দিন পর্যন্ত চালু রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রস্তুত রাখা ৫৭টি লঞ্চে সিঙ্গেল, ডাবল, ভিভিআইপি, ভিআইপি, সেমিভিআইপি, শৌখিন ও ফ্যামিলি ক্যাটাগরিতে দুই হাজারের বেশি কেবিন রয়েছে। রমজান শুরুর পর থেকেই সাধারণ যাত্রী ও তাদের স্বজনরা এসব কেবিন পেতে লঞ্চের অফিসগুলোতে বুকিং দিতে তদবির শুরু করেন। অগ্রিম টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে পাওয়ার আগেই লঞ্চের কাউন্টার থেকে টিকিটের অনুকূলে স্লিপ দেয়া শুরু করা হয়েছে। 

স্লিপ দিলেও নির্ধারিত সময়ে স্লিপ সংগ্রহকারীদের নামে কোনো কেবিন থাকে না। অর্থাৎ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় যাকে ইচ্ছা কেবিন দিয়ে দিতে পারে। এ কারণে, বাড়ি ফেরার নানা ঝামেলার সঙ্গে যোগ হয় টিকিট পাওয়ার জন্য লবিংয়ের ধকল। ফলে যাত্রীদের ভরসা হয়ে ওঠে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে যুক্ত দালাল চক্র।

বরিশাল নদীবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিকিট কালোবাজারিতে দুটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে এখন পর্যন্ত ১৭ জন যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। চক্র দুটি লঞ্চের কাউন্টারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজেশ করে নামে-বেনামে কেবিন বুকিং করে রাখছে। ঈদ সার্ভিস শুরু হলে কেবিনপ্রতি দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা বেশি দিয়ে টিকিট কিনতে হবে যাত্রীদের।

এমভি সুরভী লঞ্চের কাউন্টার ইনচার্জ ফারহান ফেরদৌস বলেন, টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। এজন্য আমরা যাত্রীর নাম ঠিকানা রেখে স্লিপ দিচ্ছি। ইতোমধ্যে যে পরিমাণ স্লিপ জমা পড়েছে, সেই পরিমাণ কেবিন দেয়া অসম্ভব। ফলে চিন্তা করেছি লটারির মাধ্যমে কেবিন বিতরণ করা হবে।

এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার বেল্লাল হোসেন জানান, আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে কেবিনের টিকিট ছাড়া হয়। পরে এসে টিকিট না পেয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে নানা অভিযোগ করেন। বাস্তবিক অর্থে টিকিট কালোবাজারির সুযোগ নেই। এমভি সুন্দরবন লঞ্চের বুকিং অফিস ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, টিকিটের কালোবাজারি ঠেকাতে ৬ এপ্রিল থেকেই আমরা স্লিপ নেয়া শুরু করেছি। স্লিপ অনুযায়ী যাত্রীদের টিকিট দেয়ার চেষ্টা করব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন তথা সহজতর করার লক্ষ্যে টিকিট কালোবাজারি রোধে ডিএমপি কমিশনার একটি নির্দেশনা জারি করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল অর্থাৎ গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদসহ অন্যান্য স্থানে বাসের টিকিট সংগ্রহে; ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত রেলওয়ে স্টেশন অর্থাৎ কমলাপুর, বিমানবন্দরসহ ট্রেনের টিকিট সংগ্রহের স্থানে এবং সদরঘাটসহ লঞ্চের টিকিট সংগ্রহের অন্যান্য স্থানে যেন কোনও ধরনের টিকিট কালোবাজারি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিবি টিমকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে টিকিট কালোবাজারকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া রেলের টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে রেল পুলিশকে সর্বাত্মক সহায়তা করার কথাও বলা হয়েছে।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছি। কেউ যাতে টিকিট কালোবাজারি করতে না পারে সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই নজরদারি রাখা হয়। ঈদ উপলক্ষে এই নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে। আমরা চাই, ঈদে ঘরমুখো মানুষ যেন কোনও হয়রানির শিকার না হয়।

জাগরণ/ইউসুফ