সুনামগঞ্জ থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা কবলিতদের উদ্ধার কিাজ ও ত্রাণ সহায়তা চলমান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পানি নেমে গেলে যে অসুবিধা আসতে পারে সেজন্য সরকার প্রস্তুত রয়েছে।
রবিবার সকালে ‘সাফ চ্যাম্পিয়ন ২০২১ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী জাতীয় ফুটবল দল’-এর সংবর্ধনা ও আর্থিক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, অপর দিকে বর্ষাকাল আসতে না আসতেই বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ব্যাপক বন্যা। এবারের বন্যাটা একটু বেশি, ব্যাপক হারে এসেছে।
প্রতিনিয়ত বন্যা পরিস্থিতির খবর রাখছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণ এবং উদ্ধারকাজগুলো আমরা করছি। প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে মানুষকে উদ্ধার এবং তাদের ত্রাণ দেয়ার সব ব্যবস্থা আমরা করেছি ।’
‘আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী নিজ এলাকায় নেমে গেছেন, তারাও সহযোগিতা করছেন। খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে উদ্ধারে অংশ নিচ্ছেন। স্যালাইনের ব্যবস্থাসহ বিশুদ্ধ পানি এবং সেই সাথে সাথে অন্যান্য যা যা দরকার হতে পারে আমরা সবকিছুর ব্যবস্থা করেছি।’
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে আজ পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু এই পানি যখন নামবে, তখন আমাদের অন্যান্য অঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করবে- এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। কাজেই আমাদের ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগেও যে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে, সেটি আগে থেকেই সতর্ক করে দিচ্ছি। বন্যা মোকাবিলায় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য যা যা করণীয় আমরা সেটাও করে যাচ্ছি।
বন্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বন্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আর এটা প্রকৃতির খেলা, এটা নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে, সেইসঙ্গে মানুষের জীবনও চালাতে হবে।
‘বন্যা তো আমাদের চিরাচরিত’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিছুদিন পরপর, বিশেষ করে ১০ থেকে ১২ বছর পর এত বড় বন্যা বাংলাদেশে আসে সবসময়। আমি সবাইকে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করেছিলাম। এবারের বন্যাটা কিন্তু বিরাট আকারে আসবে। আমাদের প্রস্তুতি আছে। এই পানি নামলে শ্রাবণ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হবে। এই সময়ে মানুষের যেন কষ্ট না হয়, আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের বিষয়ে সরকার প্রধান বলেন, সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ৯৮ সালে দেশে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়েছিল। সেই বন্যা শুরুর আগেই কিন্তু যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করেছিলাম। উদ্বোধন করেছিলাম বলেই তখন উত্তরবঙ্গে পণ্য পরিবহনসহ সব কাজগুলো করতে সুবিধা হয়েছিল।
তিনি বলেন, তখন অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন ইউএনডিপি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলেছিল, বন্যায় দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমি বলেছিলাম একটা মানুষকেও আমি না খেয়ে মরতে দেবো না, আমরা দিইনি। সেতু উদ্বোধন করায় আমাদের বন্যা মোকাবিলা করা অনেক সহজ হয়েছিল। আমরা ২৫ তারিখ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব ইনশাল্লাহ। আমি মনে করি এটা আল্লাহর আশীর্বাদ হবে। কারণ আমরা দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগটা অব্যাহত রাখতে পারব। পণ্য পরিবহন, বন্যা মোকাবিলা, বন্যার সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সহযোগিতা করার একটি বিরাট সুযোগ আমাদের আসবে।
এসকেএইচ//