
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে দল কাকে মনোনয়ন দেবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে দলের মনোনয়ন বোর্ড। তৃণমূলের জনপ্রিয়তার ওপর করা একটি সার্ভে রিপোর্ট মনোনয়ন বোর্ডের কাছে রয়েছে। এসব বিবেচনা করেই আওয়ামী লীগের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্বোধন করে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি লিগ্যাল ব্যাটেল (আইনি লড়াই) করে তারা যদি তাদের নেত্রীকে মুক্ত করে তাহলে তাদেরকে স্বাগতম। এটা আইনের বিষয়। আইনগত ভাবে সমাধান হবে। তারা আন্দোলন করে বেগম জিয়াকে মুক্ত করবে এটা এখন আর দেশের জনগণ বিশ্বাস করে না। কারণ তাদের আন্দোলন আষাঢ়ের তর্জন-গর্জনেই সার। এর কোনো আবেদন নেই।
‘আপনাদের গঠনতন্ত্র স্পষ্টভাবে বলা আছে, উপজেলার বর্ধিত সভার মাধ্যমে চেয়ারম্যান পদটি মনোনয়ন দিতে হবে কিন্তু অনেক জায়গা অভিযোগ আসছে, এমপি তাদের প্রভাব খাটিয়ে একক নাম পাঠাচ্ছে ‘- এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, সেরকম অভিযোগ আসতে পারে। এখন এককভাবে নিয়ম ভঙ্গ করে যদি কোনো নাম বা তালিকা আসে, সে জন্য তো আমাদের মনোনয়ন বোর্ড আছে। কেউ কোনো অনিয়ম করলো কি না সেটা দেখার জন্য আমাদের এই বোর্ড। তৃণমূলের নামগুলো সঠিক ভাবে আসছে কি না, সেটা দেখার জন্যই তো আমাদের এই মনোনয়ন বোর্ড। সঠিকভাবে নাম না এলে, সঠিকভাবে কী করতে হবে তার সার্ভে রিপোর্টও আছে। সব মিলিয়ে আমরা মনোনয়ন দিব। শুধু তৃণমূলের রিপোর্টের উপর আমরা ভিত্তি করব না। কারণ তৃণমূলের রিপোর্টে যদি কোনো রকম ম্যানিপুলেশন হয় সেই অবস্থায় সার্ভে রিপোর্ট আমাদের কাজে দিবে।
শর্ত দেয়া হয়েছিল যাদের নাম তৃণমূল থেকে আসবে শুধুমাত্র তাদের কাছে ফরম বিক্রি করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, আমরা মনোনয়ন দেব কাকে সেটা মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নিবে। কিন্তু ফরম বিক্রির ব্যাপারে আমরা যদি মনে করি কাউকে দেয়া উচিত, ফরম বিক্রি করা দরকার... অনেক জায়গা ডিস্ট্রিক্ট চেয়ারম্যান অনেকেরই নাম নেই। অনেকে হয়তোবা অভিযোগ করেছে- আমার নামটি অন্যায়ভাবে পাঠায়নি এই ধরনের অবস্থায় ফরম বিক্রি করতে তো কোনো অসুবিধা নেই। ফরম আমরা দিয়ে দিব এরপর বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে মনোনয়ন কাকে দেবে।
অনেক এমপি এবং মন্ত্রী এবং শীর্ষ নেতারা তাদের নিজ এলাকার প্রার্থীর নাম এককভাবে পাঠাচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে যে মনোনয়ন বোর্ড বসবে সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে যাচাই-বাছাই করে জনগণের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই আমরা সিলেক্ট করব।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার দরজা কারো জন্য কখনো বন্ধ ছিল না। শেখ হাসিনার দরজা সবার জন্য সব সময় খোলা থাকবে। কেউ কোনো বিষয়ে কথা বলতে চাইলে, তার কাছে নিয়মমাফিকভাবে আলোচনা করতে চান আমাদের নেত্রী দুয়ার খোলা আছে আমি এটা বলেছি।’
বিএনপি বলছে জাতীয় নির্বাচনে যেমন ভোট ডাকাতি হয়েছে ডাকসু নির্বাচনে ভোট ডাকাতির আশঙ্কা রয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, নির্বাচনের আগেই তারা হেরে যাচ্ছে। এটা তো তাদের পুরনো অভ্যাস। এটা তাদের স্বভাবসুলভ বক্তব্য। যেকোনো নির্বাচনে ফলাফল ভোট গণনা পর্যন্ত তারা অভিযোগ আনে। কারচুপির হচ্ছে, ডাকাতি হচ্ছে- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারা একই অভিযোগ এনেছিল। তারা রাত ১০টা পর্যন্ত এমন কারচুপির অভিযোগ এনেছিল, কিন্তু পরে দেখা গেল তাদের প্রার্থী জিতল। শুধু সেটা নয়, ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কারা জিতল? কিন্তু ভোট গণনাকালে তারা বলেছে- কারচুপি হয়েছে, দখল হয়েছে, জালিয়াতি হয়েছে। এটা বিএনপির পুরনো অভ্যাস নালিশের রাজনীতি তাদের নতুন নয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আসলে নেতিবাচক রাজনীতিতে গভীর খাদের কিনারায় চলে এসেছে। তাদের এখন খাদে পড়তে আর বেশি বাকি নাই। এ অবস্থায় তারা বেসামাল হয়ে বেপরোয়া হয়ে, যখন যা খুশি তাই বলছে। এখানে কোনো যুক্তি নেই, এখানে কোনো বাস্তবতা নেই। কারণ এই নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে এই মুহূর্তে কোনো প্রশ্ন নেই। দুনিয়ার সব সভ্য গণতান্ত্রিক দেশগুলো এই নির্বাচনে বিপুল জয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার কথা স্বয়ং জাতিসংঘ থেকেও উচ্চারিত হয়েছে। কাজে নির্বাচন নিয়ে কোথাও কোনো প্রশ্ন নেই কোথাও কোনো বিতর্ক নেই এবং দেশ ও জনগণের মাঝে কোনো প্রকার বিরূপ সমালোচনা নেই। একমাত্র বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতারাই আজকে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। কাজেই তারা কে কী বলল তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। কারণ এটা ব্যর্থ বিএনপির অসংলগ্ন প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এএইচএস / এফসি