• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০১৮, ০৯:৫১ পিএম

অবৈধ উপার্জন

ডিআইজি প্রিজন, জেলসুপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দারা

ডিআইজি প্রিজন, জেলসুপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দারা
গ্রেফতার হওয়া চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস

ট্রেন থেকে মাদকদ্রব্য বিপুল পরিমাণ টাকাসহ গ্রেফতার চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস আটকের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক এবং ডিআইজি প্রিজন্স পার্থগোপাল বণিককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ জন্য তাদের হাজির হওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে।

এদিকে দুইদিনের রিমান্ড শেষে সোহেল রানাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোহেল রানা রিমান্ডে থাকা অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদে অবৈধ টাকার উপার্জনের সঙ্গে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন্স পার্থগোপাল বণিক জেলসুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি জানান। ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মজিদ এ তথ্য জানান।

এদিকে পুলিশ রিমান্ডে সোহেল রানা বিশ্বাসের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন্স পার্থগোপাল বণিক জেলার প্রশান্ত কুমারকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে ডাকা হচ্ছে। বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।

ওসি আবদুল মজিদ বলেন, রিমান্ডে সোহেল রানা জানিয়েছেন ওই দিনের জব্দকৃত ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকার মধ্যে ১২ লাখ টাকা ছিল চট্টগ্রাম কারাগারের ডিআইজি প্রিজন পার্থ কুমার বণিক সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিকের। জব্দকৃত আড়াই কোটি টাকা কোটি ৩০ লাখ টাকার চেকের উৎস সম্পর্কে সোহেল রানা বলেছেন টাকাগুলো কারাগারে মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অবৈধ রোজগারের।

সোহেল পুলিশকে আরও বলেছেন চট্টগ্রাম কারাগারে অবৈধভাবে প্রতি মাসে আড়াই কোটি টাকা রোজগার হয়। এই টাকার অংশ হিসেবে মাসে ৪২ লাখ টাকা ভাগ পান সোহেল।

২৮ অক্টোবর গ্রেফতার হওয়ার দিন ট্রেনে ময়মনসিংহ গিয়ে চেকের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের পর পহেলা নভেম্বর ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল সোহেলের। এদিন কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে জেলারদের সঙ্গে সভা করে এসব টাকার ভাগের অংশ চট্টগ্রামের ডিআইজি প্রিজন সিনিয়র জেল সুপারের লোকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল তার।

গত ২৮ অক্টোবর জেলার সোহেল রানাকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে বিপুল পরিমাণ টাকা মাদকসহ গ্রেফতারের পর কিশোরগঞ্জ আদালতে চালান দিয়ে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে তার দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। দুইদিন থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পহেলা নভেম্বর সকালে তাকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ।

কারাগারে অবৈধভাবে টাকা কামানোর বিষয়ে সোহেল পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়ে বলেন, ঠিকাদার অজিত নন্দির মাধ্যমে কাঁচা বাজারের সঙ্গে মাদক ঢুকিয়ে কারাগারের মাদকাসক্ত বন্দিদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি, বন্দিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে অন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো, কারাগারে ভালো রুমে কম বন্দিদের সঙ্গে আরামে রাখা, রিমান্ডের আসামিকে কষ্ট না দিয়ে ভালোভাবে রাখা, দীর্ঘদিনের সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ও কয়েদিদের স্ত্রীর সঙ্গে রাতযাপনের সুযোগ করে দেয়া, বেশি টাকা দিলে হাসপাতালে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া, সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের বিনাশ্রমে রাখা, বিনাশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের অপরিচ্ছন্ন কাজ করানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, কারাগারে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, স্থানীয় বন্দিদের দূরের কারাগারে স্থানান্তরের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, এমনকি খারাপ বন্দিদের দিয়ে ভালো বন্দিদের প্রতিদিন নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হতো।

কারারক্ষী আনোয়ারের নেতৃত্বে আটজন কারারক্ষী এবং কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন।

এদিকে ঘটনার পর গত ২৮ অক্টোবর কারা মহাপরিদর্শক কার্যালয় থেকে সোহেল রানা বিশ্বাসকে বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান সহকারী কারা মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তবে সোহেল রানার জবানবন্দির অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেছেন, নানা অপকর্ম, অফিসিয়াল শৃঙ্খলা ভঙ্গ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতসহ বিভিন্ন অভিযোগে এর আগেও তিনবার বরখাস্ত হয়েছিলেন সোহেল রানা। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সোহেল মিথ্যা, বানোয়াট কাল্পনিক গল্প সৃষ্টি করে এসব কথা পুলিশকে জানিয়েছেন। অবৈধ টাকার উৎস সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্তে সব প্রমাণ হবে।

একই সঙ্গে জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসের জবানবন্দির এসব বিষয় অস্বীকার করে চট্টগ্রাম কারাগারের ডিআইজি প্রিজন পার্থ কুমার বণিক বলেন, জেলার সোহেল একজন মাদকসেবী। তার অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট কাল্পনিক। পুলিশের হাতে বিপুল টাকা নিয়ে গ্রেফতারের পর অসত্য কথা বলেছেন সোহেল। ওই টাকা এবং আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সঠিক নয়।