আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির প্রভাবে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের কপালে দুর্ভোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাছাড়া ডেঙ্গুর ভরপুর মৌসুম চলতে থাকায় ঈদেও নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার জোরালো আশঙ্কা আছে।
ঈদ ছুটির প্রভাবে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের পাশপাশি নতুন আক্রান্তরাও দুর্ভোগে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, ছুটির কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাজধানী ত্যাগ করবে বলে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য রক্ত সংগ্রহেও ব্যাপক ভোগান্তি আসতে পারে।
চলতি মাসে প্রতি মুহূর্তেই রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। ২৫ জুলাই সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩৯০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। নতুন আক্রান্ত ৩৯০ জন নিয়ে এ বছর জানুয়ারি থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ৯ হাজার ৬৫৭ জনে গড়ালো। বর্তমানে ভর্তি আছেন ২ হাজার ২৪২জন।
সরকারি হাসপাতালের পাশপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু রোগী ও তাদের স্বজনদের মারাত্মক ভীর সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩৯০ জনের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩৬ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৮ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২২ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৯ জন, বারডেম হাসপাতালে ৪ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৩৭ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪১ জন, বিজিবি হাসপাতালে ৩ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এছাড়া ইবনে সিনা হাসপাতালে ১১ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৯ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২৯ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ২১ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ১৭ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ও চিকিৎসক আয়েশা আক্তার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঈদ ছুটির প্রভাব যেন ডেঙ্গু রোগীদের উপর না পড়ে, সেজন্য এরইমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। সব সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটির পরিমাণ কমিয়ে ফেলা হবে। যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে ততদিন হাসপাতাল থেকে কর্মীদের ছুটি দেয়া হবে না।
এরপরও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এসব জানানোর পর সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি একজন ডেঙ্গু রোগীর স্বজন ইসলাম উদ্দিন দৈনিক জাগরণকে বলেন, ঈদের কারণে তো পুরা ঢাকা ফাঁকা হয়ে যায়। চিকিৎসক-নার্স পাওয়া যায় না, ফার্মেসি বন্ধ থাকে। খোদাই জানেন, কী আছে কপালে।
সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি একজন ডেঙ্গু রোগীর স্বজন জান্নাতুল ফেরদৌস দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমার রোগীকে দুবার রক্তের প্লাটিলেট দিতে হয়েছে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর দাতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রোগীর অবস্থা এখনও ভালো নয়। যদি ঈদের সময় আমাদের হাসপাতালে থাকতে হয়, তখন যদি রক্ত লাগে, বিপদ নিশ্চিত। মানুষজন ছুটিতে চলে যাবেন ঢাকার বাইরে। এজন্য এখন রক্ত পাওয়া যতটা সহজ, ঈদ ছুটিতে ততটা সহজ আর থাকবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, ঈদের ছুটিতে কোনো সমস্যা হবে না। ছুটিতে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এবার ঈদে পূর্বের ঈদের মতন ছুটি দেয়া হবে না। যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি, সেসব হাসপাতালে আমাদের কর্মীদের ছুটি দেয়া হবে কম। মোট কথা, চিকিৎসায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য সব রকমের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
আরএম/ এফসি