শ্রীলঙ্কায় যা ঘটছে তা দেখে আমরা গভীরভাবে ব্যথিত। চলতি মাসের ১২ এপ্রিল থেকে দেশটি সকল বিদেশী ঋণের কিস্তি ফেরত দিতে পারবে না বলে নিজেই ঋণখেলাপী হিসেবে এক ব্যতিক্রমী ঘোষণা দিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে লজ্জার এবং দুঃখের। এমনটি এ অঞ্চলে আগে কখনও ঘটতে দেখিনি। আরও বেদনাদায়ক বিষয় হলো একটি নির্দিষ্ট মহল ‘কমলার সঙ্গে আপেল’ এর তুলনা করে আমাদের এই সুন্দর দক্ষিণ এশীয় বন্ধু রাষ্ট্রের দুর্দশাকে পুঁজি করে বাংলাদেশের সম্ভাবনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা নেই সে দাবি আমি করবো না। কিন্তু আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির শক্তিমত্তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ যে নেই সে কথা তো মানতেই হবে। বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ ‘ধ্বংসস্তুপ থেকে সমৃদ্ধির পথে’ই হেঁটে চলেছে। বিশেষ করে ২০০৯ সালের পর থেকে সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচকের হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্ব আর্থিক মন্দা এবং সর্বশেষ করোনাকাল পেরিয়ে সাহসের সঙ্গেই সম্ভাবনার পথে হাঁটছে। চ্যালেঞ্জ নিশ্চয় আছে। তবে সম্ভাবনার পাল্লাই ভারি। দুর্ভাগ্যবশত শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা উবে গেছে। চ্যালেঞ্জ তীব্র থেকে তীবতর হচ্ছে। তাই, একথা শুরুতেই মেনে নেয়া ভালো যে এই দুই দেশের বিভিন্ন শক্তি ও দুর্বলতাসহ প্রবৃদ্ধির ভিন্ন ভিন্ন গতিপথ রয়েছে। সে কারণেই তাদের এক পাল্লায় মাপার সুযোগ নেই।
দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুর হওয়ার কথা ছিল শ্রীলঙ্কার। ১৯৮০-এর দশকে যখন প্রথমবার গিয়েছিলাম তখন শ্রীলঙ্কা এত ভালোভাবে সমৃদ্ধ হতে দেখে আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। পরবর্তী সময়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক শক্তিকে বৈশ্বিক রেটিং এজেন্সিগুলি বিনিয়োগের গ্রেড হিসাবে রেট করে। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রিজার্ভকে বৈচিত্রময় করতে শ্রীলঙ্কার সার্বভৌম বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। প্রায় ২৬ বছর ধরে একটি মারাত্মক গৃহযুদ্ধ সত্ত্বেও অর্থনীতির উন্নতি অব্যাহত ছিল। মাথাপিছু জিডিপি ২০০৬ সালে ১,৪৩৬ মার্কিন ডলার থেকে ২০১৪ সালে ৩,৮১৯ মার্কিন ডলারে উন্নিত হয়েছে। দেশটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক রূপান্তরের বিশাল শক্তি প্রদর্শন করে বিশ্বব্যাংকের উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশগুলির গ্রুপে যোগদান করেছে। তবে আয় বুঝে ব্যয় করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারার খেসারত এখন দেশটিকে দিতে হচ্ছে। পরিবারতন্ত্র ও গোষ্ঠিপ্রীতির কুপ্রভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ধ্বস নামে। ২০০৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ তিনগুণ বেড়েছে। সরকারি ঋণ জিডিপির অনুপাতে ১১৯ শতাংশে উঠে গেছে। জিডিপির অনুপাতে বৈদেশিক ঋণ এখন ৭০ শতাংশের বেশি। অলাভজনক বিরাট বিরাট প্রকল্পের (যেমন সমুদ্র ও বিমানবন্দর) ঋণের দায়ও বেশি। ঋণ পরিশোধ বাবদ সরকারের রাজস্বের ৭২% পর্যন্ত চলে যায়। এ বছরই তার ৭ বিলিয়ন ডলার ফেরৎ দেবার কথা। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে খেলাপি এড়াতে আরও বেশি রুপি মুদ্রণ করতে হয়। ফলে মূল্যস্ফীতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এমনিতে ডাবল-ডিজিট মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। তার ওপর এই উন্নয়ন বিলাসের কারণে বাড়তি মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ দিশেহারা। জ্বালানি তেল মিলছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুত নেই। চাল ও রুটির দাম আকাশছোঁয়া। অনেক সময় দাম দিয়েও মিলছেনা।
দুর্ভাগ্যবশত, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশটি অনেকগুলো রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক এবং সামাজিক ধাক্কার মুখোমুখি হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক ফ্রন্টে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ২০১৮ সালে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট, ২০১৯ সালে গির্জা এবং বিলাসবহুল হোটেলগুলিতে ইস্টার বোমা হামলা করে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়। ফলে পর্যটক উধাও। ভারী বর্ষা এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও অর্থনীতিতে মারাত্মক আঘাত করে। সর্বোপরি, কোভিড-১৯ এর আকস্মিক বিস্ফোরণ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটকে আরও গভীর করে তুলেছে। এখন দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানীতে। রেটিং এজেন্সিগুলো শ্রীলঙ্কাকে ডাউনগ্রেড করে চলেছে। নিঃসন্দেহে সরকারের অর্থনৈতিক নীতি কৌশল বিচক্ষণ ছিল না। কোনো নির্ভরযোগ্য গবেষণা ও আগাম পর্যালোচনা (সিমুলেশন) ছাড়াই সরকার একের পর এক জনতুষ্টিবাদী অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট এজেন্সিগুলো আর দেশটির আর্থিক নীতি ব্যবস্থাপনার ওপর ভরসা রাখতে পারছে না। আর এখন তো আস্থা পুরোপুরিই শেষ হয়ে গেছে।
একটি গুরুতর গবেষণা এবং সিমুলেশন ছাড়াই সরকার অর্থনীতিকে প্রণোদিত করার জন্য আগে পিছে না ভেবেই ভ্যাট ও কর ব্যাপক হারে কমিয়ে ফেলে। পূর্ণ মাত্রায় জৈব সার ব্যবহারের জন্য রাসায়নিক সার আমদানি নিষিদ্ধ করায় ধান ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন হ্রাস পায়। অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা কারণে জ্বালানি, গ্যাস এবং অনেক খাদ্যদ্রব্য আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়। দুধ, কমলা ও গৃহস্থালির যন্ত্রপাতিসহ ৩৫০টি অ-অপরিহার্য/গৌণ জিনিসের আমদানি নিষেধাজ্ঞা মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে চরমভাবে অসন্তুষ্ট করেছে। বিক্ষোভ দমনে দেশটিকে দীর্ঘ কারফিউ জারি করতে হয়েছিল। এখনও পরিস্থিতি থমথমে।
তবে, সবচেয়ে বড় সঙ্কটের উৎপত্তি হয় শ্রীলংকার সামষ্টিক অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার কারণে। আগেই যেমনটি বলেছি, দেশটি প্রয়োজন বিবেচনা না করে এবং বিনিয়োগের রিটার্নের পরিমাণ আমলে না নিয়েই উচ্চ সুদে দ্বিপাক্ষিক ঋণ (যার সুদ ছয় শতাংশের বেশি) গ্রহণ করেছে। এর ফলে এক দিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমেছে। অন্যদিকে, জিডিপি অনুপাতে পাবলিক ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। সর্বশেষ রিজার্ভ অবস্থান প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। অথচ দেশটিকে এই বছরই তার ঋণদাতাদের প্রায় সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করতে হবে। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের সার্বভৌম বন্ডে প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। শুরুতে, শ্রীলঙ্কা আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের কাছে সাহায্য চাইতে দ্বিধাবোধ করেছিল। কারণ, এ সাহায্যের শর্ত হিসেবে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং উদারীকরণ সম্পর্কিত নীতি গ্রহণ করতে হত। যার ফলে শ্রীলংকার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে গুরুতর স্বল্পমেয়াদী প্রভাব পড়ত। তার পরিবর্তে, দেশটি সহায়তা পাবার জন্য আঞ্চলিক বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে গিয়েছিল। বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কিছুটা কমাতে ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই এগিয়ে এসেছে। দেশটি চীন এর কাছ থেকে আরও সমর্থন চেয়েছে। এছাড়াও, এখন আইএমএফের সাহায্য চাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে। যাহোক, দেশটির সামাজিক, এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন একটি স্তরে অবনতি হয়েছে যা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির বিশাল ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের প্রতিবাদকে শান্ত করার জন্য আইএমএফের ‘তেতো ওষুধ’ কাজে নাও লাগতে পারে। অথচ সাপ্লাই চেইন বাড়ানোর জন্য খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি অবিলম্বে পুনরুদ্ধার করা না গেলে অর্থনৈতিক সংকটের উত্তাপ কমানো সহজ হবে না। মনে রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতি গত পাঁচ মাসে তিনগুণ বেড়ে এখন ১৭.৫ শতাংশে পৌঁছেছে। আর তা দিন দিন বাড়ছে।
এছাড়াও, আইএমএফ এর প্রত্যাশা পূর্ণ করার জন্য রুপির বিনিময় হারকে মার্কিন ডলারের সাথে যুক্ত করার কারণে শ্রীলঙ্কান রূপির বিনিময় হারে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এপ্রিল ৯ তারিখে এক ডলার কিনতে ৩১৫ রুপি লেগেছে। ২০২১ সালের এই সময়েও তা ছিল ১৯৯ রূপি। অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার কারণে বৈদেশিক রেমিটেন্সের প্রবাহও ব্যাপকভাবে কমে গেছে। তাদের মুদ্রার অবাধ পতন দেখে বাজারে ডলার বিক্রি করছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মস্কোগামী ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এই দুই দেশের পর্যটক প্রবাহও বন্ধ হয়ে গেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কিছু আলোকপাত করা যাক। একটি ধারাবাহিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতি অতিমারী সত্ত্বেও গত বারো থেকে তেরো বছর ধরে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন, ভিয়েতনাম এবং ভারতকে ছাড়িয়ে উদীয়মান এশিয়ায় মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশেই সবচেয়ে ভালো হয়েছে। কৃষি, রেমিটেন্স এবং রপ্তানি (আরএমজিসহ) বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ। করোনা সংকট থেকে দ্রুত গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে বাংলাদেশ। তাই আমদানি চাহিদা খুবই বাড়ন্ত। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আগে থেকেই বির্যস্ত সরবাহ চেইন আরও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। বেড়েছে জাহাজিকরণের খরচ। তাই জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫০.৪৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময় থেকে বৃদ্ধির হার ৪৬.২১%। ফেব্রুয়ারি ও মার্চেও এই হার ছিল আরও বাড়ন্ত। তাই বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়ে ফেব্রুয়ারি শেষে ২২ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে। চলতি হিসেবেও বড় ঘাটতি (১২ বিলিয়ন ডলার) দেখা দিয়েছে। তাই টাকার মানের ওপর চাপ পড়েছে। মাঝখানে রেমিটেন্স বৃদ্ধির হার নেতিবাচক হয়েছিল। মার্চ থেকে তা আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। ১-৯ এপ্রিলের প্রবাসী আয় আগের বছরের ঐ সময় থেকে ৭.৩% বেশি। আমার বিশ্বাস পুরো এপ্রিলে এই ইতিবাচক ধারা আরও গতি পাবে। তাছাড়া, এর পরপরই আসবে ঈদ-উল-আজহা। তাকে ঘিরেও প্রবাসী আয় বাড়বে। রপ্তানি এমনিতেই ইতিবাচক ধারায় আছে। মার্চ নাগাদ তার বৃদ্ধি ছিল ৩৩.৪১%। এ মাসে এই হার আরও বাড়বে বলে মনে হয়। আমরা যদি ডলার-টাকার বিনিময় হারটি আরেকটু নমনীয় করতে পারি তাহলে প্রবাসী আয় ও রপ্তানী দুইই বাড়বে। অফিসিয়াল ও কার্ব মার্কেটে ডলার-টাকা বিনিময় হারের পার্থক্য কমিয়ে আনতে পারলে বাইরে থেকে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। আর ডলারের দাম বাড়লে আমদানির ওপর চাপ পড়বে। আমদানি কমবে। একই সঙ্গে যদি অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাস পণ্যের আমদানির ওপর ঋণের মার্জিন বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দিলে এসব পণ্যের আমদানি কমবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে নূন্যতম ঋণ মার্জিন ২৫% করে দিয়েছে। বিলাসী পণ্যের জন্য তা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। একদিকে আমদানি কমিয়ে আনা এবং অন্যদিকে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনকে অবশ্যই আমরা ভারসাম্যপূর্ণ করতে পারবো। আমাদের বড় বড় প্রকল্পের জন্য যে ঋণ নিয়েছি সেগুলোর দায় শোধ যেন এক সঙ্গে না চাপে সেজন্য পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন ও পরিশোধ সূচি নিশ্চিত করা জরুরি। সেজন্য ইআরডি, অর্থবিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয় গভীরতর করতে হবে। সুবিন্যস্তভাবে দায় শোধ করলে একবারে ডলারে দায় শোধের চাপ পড়বে না।
তবে আমাদের দায় শোধ নিয়ে যেভাবে ভয় দেখানো হয় তা কিন্তু সঠিক নয়। আমাদের মোট দায় জিডিপির ৩৮ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণের দায় ১৩ শতাংশ। আমাদের এখন মোট বৈদেশিক ঋণ ৯০.৯৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১৫.৪৬ বিলিয়ন ডলার। মোট ঋণের ১৭ শতাংশের মতো। আমাদের রিজার্ভ পরিস্থিতিও শক্তিশালী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। তাছাড়া, কোভিড-উত্তর পুনরুদ্ধারে এডিবি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ সহ বিশ্ব উন্নয়ন সংস্থা থেকে আমরা দীর্ঘমেয়াদী সস্তা ঋণ পেয়েছি এবং পাচ্ছি। তাই হঠাৎ করে শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে বাংলাদেশ এমন ধোঁয়া যারা তুলছেন তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। শ্রীলঙ্কা যেখানে রাজস্ব আহরণ কমিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সেখানে কিন্তু সবশেষ পনেরো শতাংশ হারে রাজস্ব আদায় করছে। এই ধারা আরও বেগবান করতে কর কাঠামোর সংস্কার ও ডিজিটাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য যে ঋণ নেয়া হয়েছে তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির তুলনা করতে চাইছেন কেউ কেউ। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণ এখনও মাত্রা ২৯২ মার্কিন ডলার (শ্রীলঙ্কার ১,৬৫০ মার্কিন ডলার। তবে এটাও ঠিক যে আমাদের সরকারি প্রকল্পের ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা দরকার। বড় বড় প্রকল্পগুলোকে আরও বিন্যস্ত করে অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো উচিত। যে সব প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রায় সম্পন্ন সেগুলোর দিকে বেশি নজর দিন। যেগুলো এক্ষুনি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান দেবে সেগুলো আগে বাস্তবায়ন করা। যেহেতু প্রত্যেক টাকা খরচের পেছনে ডলার খরচ আছে তাই প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং-এ আরও সুনজর দিতে হবে। আর আমাদের কৃষি তো রক্ষা কবচ হিসেবে আছেই। তাই কৃষির দিকে নজর অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের বাণিজ্যিক কৃষি উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে অসাধ্য সাধন করেছেন। প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা তাদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছেন। তবেই বাংলাদেশ তাঁর গতিময়তা রক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। নিজের পায়ে গুলি না করে আসুন আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ হই। সমাজে ও রাজনীতিতে শান্তি রক্ষা করে স্ব স্ব জায়গা থেকে কাজ করলে বাংলাদেশ আরও জোরে জোরে হাঁটবে বলে আমার বিশ্বাস। সেজন্যে সুশাসন ও সুনীতির দিকে আরও মনোযোগী হতে হবে সকল অংশীজনকে।
লেখক: অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।