
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে স্ত্রীর স্বীকৃতি চাইতে এসে অগ্নিদগ্ধে নিহত তরুণী শাহিনুর আক্তারের ময়নাতদন্ত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকা মেডিকেলে সম্পন্ন হয়েছে। তার লাশ চট্টগ্রামের রাউজানে বাবার বাড়িতে দাফনের কথা রয়েছে বলে জানান নিহতের মামা কামাল উদ্দিন।
এদিকে, এই বিষয়টি আরও নিশ্চিত করে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন জানান, নিহত শাহিনুরের মরদেহ পুলিশ হেফাজতে চট্টগ্রামের রাউজানে তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় সোমবার (২২ এপ্রিল) রাতে কমলনগর থানায় মামলা করেছেন ওই তরুণীর পিতা জাফর উদ্দিন। এতে এজাহার নামীয় ৫ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, সালাউদ্দিনের দুই ভাই মো. আলাউদ্দিন ও আবদুর রহমান বিশ্বাস, স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজ উদ্দিন ও চৌকিদার আবু তাহের। তারা বর্তমানে থানা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়েছে, কমলনগর থানাধীন চর ফলকন ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বার মাঝির টেক এলাকার জনৈক সালাউদ্দিন চট্টগ্রামের রিক্সা চালানোর সুবাধে শাহিনুর আক্তারের পরিচয় এবং দেড় বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা চট্টগ্রামের আন্ধারবাগ রহমানিয়া স্কুলের পাশে বসবাস করত। কিন্তু বিগত ৪/৫ মাস থেকে সালাউদ্দিন তার স্ত্রী শাহিনুর আক্তারের সঙ্গে যোগযোগ বন্ধ করে দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে চলে আসে। পরে তরুণী জানতে পারে যে সালাউদ্দিন এর আগে আরেকটি বিয়ে করেছে। সে ঘরে তার দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
ওই তরুণী স্ত্রীর মর্যাদা পেতে বিগত ১৫/২০ দিন আগে লক্ষ্মীপুরে সালাউদ্দিনের বাড়ি কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বানুর বাপের বাড়িতে আসেন। সালাউদ্দিন বিয়ের বিষয়ে অস্বীকার করে তাকে তাড়িয়ে দেয়।
গত শনিবার (২০ এপ্রিল) শাহিনুর আক্তার পুনরায় লক্ষ্মীপুর এসে তার স্বামী সালাউদ্দিনের কাছে স্ত্রী’র স্বীকৃতি দাবি করেন। এতে স্বামী সালাউদ্দিন রাজি না হওয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চৌকিদারের সহায়তায় এক সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সালিশ বৈঠকে শাহিনুর আক্তার বিয়ের কোন প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় উক্ত তাকে নানাভাবে তিরষ্কার অপমান অপদস্থ করে এবং এলাকা থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু তাতে শাহিনুর যেতে অস্বীকৃতি জানালে আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ছুটে গিয়ে পানি দিয়ে আগুন নেভায়। পরে তাকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থা অবনতি ঘটলে ওই তরুণীকে ঢামেকে প্রেরণ করেন। ২২ এপ্রিল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢামেকে মৃত্যু হয় শাহিনুর আক্তারের।
কেএসটি