জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে বিএনপির মত সাম্প্রদায়িত জঙ্গি তোষক রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশের রাজনীতি ময়দান থেকে মাইনাস করতে হবে। এ ধরনের শক্তিকে ক্রেন দিয়ে তুলে বিরোধী দলে বসালে তা গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার (২৪ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর বক্তৃতায় তিনি এমন দাবি করেন।
ইনু বলেন, অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক শান্তি দরকার। শেখ হাসিনা সরকারকে অনেক মূল্য দিয়ে তা অর্জন করতে হয়েছে। তাই শান্তির শত্রু অশান্তির হোতাদের কোনো ছাড় নেই, দমন এদের করতেই হবে।
তিনি বলেন, আগুন সন্ত্রাস, খুনী ও জঙ্গি সন্ত্রাস, অন্তর্ঘাত দমন, যুদ্ধাপরাধীদের দমন এসব প্রতিহিংসা না। দুর্নীতির বিচারও প্রতিহিংসা না, তাই এসবের ছাড় দেয়া ঠিক হবে না।
ইনু বলেন, রাজনৈতিক স্পেস দেয়া একটা কথা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে যারা গণতন্ত্রের পিঠে ছোবল মারে, তাদের জন্য মায়াকান্না গণতন্ত্রকেই ধ্বংস করে। এখানে এমনও রাজনৈতিক শক্তি বর্তমান যারা সামরিক শাসনামলে রাজনৈতিক বিষবৃক্ষ হিসেবে কাজ করে। বিএনপি হচ্ছে সেই দল, যারা জামাতের দিকে তাকায়, তারা সকল সাম্প্রদায়িক শক্তি ও জঙ্গি সন্ত্রাস বাদের ছাতা, তারা নিজেরাই সাম্পদায়িক দল।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি সেই দল যারা সংবিধানের চার নীতি মানে না, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা মানে না, স্বাধীনতার চার নীতি মানে না। বিএনপি কিন্তু সেই বিরোধী দল যারা ১৫ আগস্টকে খালেদা জিয়ার জম্ম দিন হিসেবে পালন করে। তারা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রীকে দল দেখে, মুখ না দেখে কঠোর হবার আহ্বান জানান।
বাজেটের বিষয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা শেখ হাসিনা সরকার ও প্রশাসন অর্জন করেছে, যার জন্য সরকার জিপিএ ফাইভ ও গোল্ডেন ৫ জিপিএ পাবেন। সুনিদ্দিষ্ট পদক্ষেপএ বাজেটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে পারে। সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে হবে, ঋণ খেলাপি কমিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজন, দুর্নীতি ও অপচয়ের রাষ্ট্রীয় খাত থেকে এ বাজেটকে রক্ষা করতে হবে। জিডিপি ও করের অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানান ইনু। শিক্ষা খাতকে ঢেলে সাজিয়ে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে আরো বেশি নজর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ করার প্রস্তাব ইতিবাচক। রাজস্ব লক্ষমাত্রা বৃদ্ধি করা ও বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। বাজেটের কিছু দুর্বলাতর দিক রয়েছে- ডিজিটাল বাংলাদেশ করার জন্য মোবাইল সেক্টরে অত্যাধিক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে, টক টাইমে বাড়তি কর ও স্মার্ট ফোনের উপর কর বৃদ্ধি, পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর বাড়ানো হয়েছে, যা ঠিক হয়নি, বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ হতাশা জনক।
তিনি বলেন, ব্যক্তি আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ করা, ধনীদের সম্পদের সার চার্জের পরিমাণ আড়াই থেকে ৩ কোটি করা হয়েছে, এটা কমিয়ে সোয়া ২ কোটি বহাল রাখা দরকার। বাজেটে ধনীদের সুযোগ দেয়া হলেও দরিদ্রদের সুযোগ দিতে হবে।
ইনু বলেন, বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়ে গত ১০ বছরে খুব একটা সুবিধা হয়নি। অর্থনীতিতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। এটা অনৈতিক ও সংবিধান পরিপন্থি, তাই কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাবটা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ছাড়া আর কেউ এ সুযোগ নেন নি। কালো টাকার বৈধ করার সুযোগ আর কেউ নিয়েছিলেন কি না তা সংসদে জানানোর জন্য অর্থমন্ত্রীকে আহ্বান জানান।
ইনু বলেন, কালো টাকা ছাড়াই দেশের প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশের উপরে বৃদ্ধি হয়েছে, তাই আমি চাই না শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাদা অর্থনীতির উপর কালো টাকার দাগ লাগুক।
এ সময় তিনি বাজেটে কৃষি অর্থনীতি, ঋণখেলাপি, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনসহ রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তিনি বলেন, এনবিআর এর রাজস্ব আয় বাড়াতে উপজেলা পর্যন্ত নিতে হবে। আমি মনে করি ১ কোটি মানুষ আয়কর দেবার সক্ষমতা রাখে। তাদের করের আওতায় আনতে হবে।
ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের বিষয়ে ইনু বলেন, ব্যাংকিং খাতে সংস্কার প্রয়োজন। ব্যাংকের আইন সংস্কারসহ ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে এ গুলোকে একীভূত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া দরকার। বড় বড় ঋণখেলাপিরা আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ঋণ আটকে রাখে, ৩৭ হাজার কোটি টাকা তারা এভাবে আটকে রেখেছে।
তিনি বলেন, আইনে যা আছে কেন্দ্রিয় ব্যাংক সেই ভাবে আইন প্রয়োগ করুক, স্বাধীনতা প্রয়োগ করুক। সেখানে অর্থমন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ না করাই ভাল। ব্যাংকিং খাতে যে বিষফোঁড়া তা ট্যাকল করার ক্ষমতা কিন্তু কেন্দ্রিয় ব্যাংকের রয়েছে। তাদের সে ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার দেয়া হোক। যতদিন ব্যাংক কমিশন না হচ্ছে ততদিন কেন্দ্রিয় ব্যাংকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন এখনই তৈরি করা ও প্রতিটি গ্রামে শস্য গোলা তৈরির ঋণ স্বল্প সুদে দেয়া হোক। সেই সঙ্গে কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়ানো, কৃষি ঋণ ফেরতের সময়সীমা বাড়ানো, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত ঢেলে সাজানো উচিত। এ দুটি খাতে জিডিপির অনুপাত বরাদ্দ বাড়ানোর ও জিডিপির পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
এইচএস/ একেএস