
আবারও আলোচনায় আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। সংগঠনটি সাংগঠনিক অভিভাবক, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার দলের সংসদীয় বোর্ডের এক যৌথসভায় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর থেকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগে সংগঠনটির নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংগঠনের নেতৃত্ব এখনই পরিবর্তন হচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো। গত রোববার ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাদেরকে সতর্ক করার পাশাপাশি সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের একটি সূত্র।
উল্লেখ্য, শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দলের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই নেতাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। সভায় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার ঘুম থেকে দেরিতে ওঠা, বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচিতে দেরিতে যাওয়া ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে গাফিলতির বিষয়গুলো আলোচনায় আসে বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। একইসঙ্গে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন বলেও গণমাধ্যমে খবর আসে। তবে এ বিষয়টি সত্য নয় বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহ-সভাপতি জানান, সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতা রোববার গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার কাছ থেকে দিক-নির্দেশনা নিয়ে এসেছেন। সেখানে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাদের কর্মকাণ্ড এবং সাংগঠনিক কাজের জন্য সতর্ক করার পাশাপাশি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করতে বলেছেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত না করার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করার পাশাপাশি সংগঠন নিয়ে যেন কোনো বিতর্ক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য বলেছেন।
তিনি আরো জানান, আগামী ৭ দিনের মধ্যে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হচ্ছে।
সূত্রগুলো বলছে, ছাত্রলীগ নিয়ে শনিবার শেখ হাসিনা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তা নিয়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগে বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার বিভিন্ন কার্যক্রমে বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী। তবে এ বিষয়টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নিজেদের ব্যক্তিগত রাজনীতি করতে চেয়েছেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের একটি সূত্র।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একটি সূত্র মনে করে, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর বিরুদ্ধে নিজেদের ভিন্নরকম স্বার্থেই তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যৌক্তিকভাবে নালিশ দিয়েছেন। ছাত্রলীগ নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা। ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়ার সংবাদ সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশের বিষয়কে দলের কয়েকজন নেতার ব্যক্তিগত রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরব এবং উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রলীগ নিয়ে বিতর্ক বা সমালোচনার বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। কারণ, ছাত্রলীগের সকল বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থাৎ ছাত্রলীগের অভিভাবক নিজেই ছাত্রলীগের সবকিছুর দেখভাল করছেন। সুতরাং ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়া হবে, কি হবে না- এসব বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর সংগঠনের সাবেক বেশ কয়েকজন নেতার রোষানলের শিকার হন তারা। তবে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব শোভন-রাব্বানীর গত এক বছরে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করেন খোদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও। এসব বিষয় নিয়েই শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শনিবারের আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের যৌথসভায়। তবে গত এক বছরের ইমেজ সংকটকে কাটিয়ে তা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা।
এএইচএস/ এফসি