• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৪, ১১:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৯, ২০২৪, ১১:৩৭ পিএম

হ্যাকিং থেকে বাঁচতে হলে করণীয়

হ্যাকিং থেকে বাঁচতে হলে করণীয়
প্রতীকী ছবি

এই মুহূর্তে আলোচনা আর চর্চার তুঙ্গে রয়েছে হ্যাকিং। বাংলদেশে অস্থিরতা আর ইন্টারনেট না থাকার সুযোগে সাইবার হামলার শিকার হয়েছে ব্যাংক, শেয়ারবাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট। আক্রান্ত বেশিরভাগ ওয়েবসাইটগুলো হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা গেলেও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে মনে করছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। এখন সাইবার হামলার চেষ্টা হচ্ছে।

হ্যাকিং আসলে কি? কিভাবে একটি ওয়েবসাইট হ্যাকিং হয়, এসব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে নেটিজেনদের মধ্যে। অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ‘ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার’ জানাচ্ছে, হ্যাকিং হলো কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের সমন্বয়ে তৈরি নেটওয়ার্ককে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার একটি প্রচেষ্টা। সহজভাবে বললে, অসৎ উদ্দেশ্যে কম্পিউটারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ নেয়াই হলো হ্যাকিং।

অসৎ ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন কারণে হ্যাকিং করে থাকে। যারা হ্যাকিং করে তাদেরকে হ্যাকার বলা হয়। এক সময়ে হ্যাকিং অসৎ ব্যক্তির খামখেয়ালি হিসেবে পরিচিতি পেলেও, এখন তা বিলিয়ন ডলারের অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এ কারণে হ্যাকিং বিশ্বব্যাপী ভয়ানক সাইবার অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশের ডিজিটাল আইনে ‘হ্যাকিং’ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে হ্যাকিং হয় কিভাবে? তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের অন্যতম উদাহরণ হলো হ্যাকিং। হ্যাকাররা বিভিন্ন কৌশলের সাহায্যে এই অপকর্মটি করে থাকে। যেমন- ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন প্ররোচনা প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিকর লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট ব্যবহার করিয়ে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টকে মনিস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে যাচাই করে নেয় হ্যাকাররা।

এরপর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য লোভনীয় বা আগ্রহ উদ্দীপক লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট প্রদান করে তাকে এসব লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলা হয়। এছাড়াও, ম্যালওয়্যারের সাহায্যে ব্যাপক হারে হ্যাকিং হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সরাসরি প্রযুক্তির অপপ্রয়োগের মাধ্যমে হ্যাকাররা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অজান্তেই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, হ্যাকারও তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ দক্ষ।

প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের মনোবৈজ্ঞানিক যাচাই পদ্ধতি ছাড়াও আরো কিছু উপায় অবলম্বন করে হ্যাকাররা বিভিন্ন সাইট ও সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং করতে পারে। যেমন, বটনেট ব্যবহার করে, ব্রাউজার হাইজ্যাকিং করে, র‍্যানসমওয়্যার ব্যবহার করে কিংবা ভাইরাস প্রয়োগ করে। এছাড়াও নানা ধরনের প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমেও এই অপকর্মটি করে থাকে হ্যাকাররা।

হ্যাকিংয়ের বিভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া। এ জেন্য ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক একাউন্টসহ স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ বা সম্পূর্ণ ব্যাঙ্কিং সিস্টেম হ্যাকের মাধ্যমে প্রতারণা করে থাকে হ্যাকাররা। দ্বিতীয়ত, কর্পোরেট বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গুপ্তচরবৃত্তি করার উদ্দেশ্যে অনেক সময় প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হ্যাকার ভাড়া এমন অপকর্ম করে থাকে।

 

তৃতীয়, জাতীয় নথিপত্র চুরি। আন্তর্জাতিক মহলে প্রভাব ও প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য অনেক সময়ে শক্তিশালী দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিযোগী দেশের জাতীয়, স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে থাকে। এই তিন উদ্দেশ্য ছাড়াও অনেক সময় প্রতিবাদের ভাষা হিসাবেও ওয়েবসাইট হ্যাকিং করা হয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রেও অর্থের বিনিময়ে হ্যাকার ভাড়া করতে হয় সংশ্লিষ্ট মহল বা চক্রকে।

হ্যাকিং থেকে বাঁচতে হলে করণীয় কি? তথ্য প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, সচেতনতাই সবচেয়ে বড় উপায়। নেট দুনিয়াতে চলতে গেলে যেমন নিতে হবে সাইবার নিরাপত্তা, তেমনি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও হতে হবে সতর্ক। প্রথমত, ভয়ঙ্কর মালওয়্যার ও র‍্যানসমওয়্যার থেকে বাঁচতে ‘অ্যান্টি মালওয়্যার’ ও ‘অ্যান্টি-র‍্যানসমওয়্যার’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক্ষেত্রে ইসেট, ক্যাস্পারস্কি, অ্যাভাস্ট বেশ জনপ্রিয়।

যে কোন অ্যাপ ডাউনলোড ও ব্যবহারের পূর্বে সেটির উৎস ও যথার্থতা যাচাই করতে হবে। ডাউনলোডের আগে রিভিউগুলো পড়ে নিলে অনেক তথ্যই জানা যায়। নিয়মিত সফটওয়্যারগুলো আপডেট করতে হবে। এক্ষেত্রে নিরাপদ উৎস থেকে ফাইল নামাতে হবে। গুগল প্লে স্টোর, আই টিউন্স, সফটোনিক, সফটপিডিয়া ইত্যাদি সাইটগুলো থেকে নির্ভরযোগ্য আপডেটসমূহ ডাউনলোড করা যায়।

ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় অপরিচিত এবং অপ্রয়োজনীয় সাইট ও লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত পাসওয়ার্ড হালনাগাদ এবং একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড নির্বাচন ও ব্যবহার করতে হবে। শক্তিশালী বলতে অনুমান করা কঠিন এমন পাসওয়ার্ড। সংখ্যা, চিহ্ন, ছোট-বড় হাতের বর্ণ  মিলিয়ে লম্বা পাসওয়ার্ড অনুমান করা কঠিন। 

জাগরণ/তথ্যওপ্রযুক্তি/কেএপি