
অনলাইনে পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও তার স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি বেজোস রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিবাহ বিচ্ছেদে সম্মত হয়েছেন। বিশ্বের শীর্ষ ধনী বেজোসকে এই বিচ্ছেদের জন্য গুনতে হবে ৩৫ বিলিয়ন ডলার বা সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার। ২৫ বছর সংসার করার পর গত জানুয়ারিতে টুইট করে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন বেজোস দম্পতি। বৃহস্পতিবার এক টুইটে ম্যাকেঞ্জি লিখেছেন, পরস্পরের সহযোগিতায় বিয়ে বিচ্ছেদের এই পর্ব শেষ করতে পেরে তিনি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
অন্যদিকে ম্যাকেঞ্জির টুইটে বেজোস রিটুইট করে লিখেছেন, সকলের ভালোবাসা এবং উৎসাহ পেয়ে একটা পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছি। যা আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পারছেন। এ জন্য আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। ম্যাকেঞ্জির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেজোস লেখেন, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তার সহযোগিতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এখন আমরা বন্ধু এবং আমাদের সন্তানদের অভিভাবক হিসেবে থাকবো। ম্যাকেঞ্জির প্রশংসা করে বেজোস লিখেছেন, সে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছে। সে একজন অসাধারণ পার্টনার এবং আমার সন্তানদের মা। সে মেধাবী এবং সম্পদশালী। ভবিষাতেও আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক থাকবে এবং আমি তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখবো।
বিচ্ছেদের মাশুল গুনতে গিয়ে ৫৪ বছর বয়সী বেজোসকে এখন শীর্ষ ধনীর মুকুট হারাতে হবে। সেক্ষেত্রে হয়ত ধনীদের তালিকায় আবার শীর্ষস্থানে ফিরবেন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস জানিয়েছে, ডিভোর্সের মাধ্যমে যে টাকার মালিক হচ্ছেন ম্যাকেঞ্জি, তাতে তিনি পরিণত হচ্ছেন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী নারীতে। অবশ্য ওয়াশিংটন রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী তিনি যদি বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বেজোসের সম্পদের আধাআধি ভাগ চাইতেন, তাহলে শীর্ষ নারী ধনীর তালিকায় তার নাম ১ নম্বরেই থাকত।
এই বিচ্ছেদের ফলে অনলাইনে পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের ৪ শতাংশ শেয়ার নিজের দখলে রাখবেন ম্যাকেঞ্জি। তবে তিনি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা এবং বেজোসের ট্র্যাভেল ফার্ম ব্লু অরিজিনে তার অংশ ছেড়ে দিবেন। অ্যামাজনের সিইও বেজোসের হাতে এতদিন কোম্পানির ১৬.৩ শতাংশ শেয়ার ছিল, যার অর্থমূল্য ১৪৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিচ্ছেদের ফলে এখন ৭৫ শতাংশ ধরে রাখবেন বেজোস। অন্যদিকে বিচ্ছেদের চুক্তি অনুযায়ী এর ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পাচ্ছেন ম্যাকেঞ্জি, তবে কোম্পানির বোর্ডে তার ভোটিং ক্ষমতা তিনি বেজোসকেই দিয়ে দিচ্ছেন।
১৯৯৪ সালে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করার আগ থেকে এক সাথে সংসার করছেন তারা। এই দম্পতি চার সন্তান। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যমতে, অ্যামাজন হলো এখন বিশ্বের সবচেয়ে অনলাইন পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। গত বছর কোম্পানিটি ২৩২.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। রেকর্ড পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের শীর্ষে এতদিন ছিলেন এলেক ওয়ালডেস্টেন এবং তার স্ত্রী জসিলিন। ১৯৯৯ সালে ৩৮০ কোটি ডলার দিয়ে বিচ্ছেদ হয় এই দম্পতির। আর এবার তার চেয়ে বহু বহুগুন অর্থ দিয়ে বিচ্ছেদ ঘটালেন বেজোস।
৪৮ বছর বয়সী ম্যাকেঞ্জি বেজোস একজন গল্পকার। ‘দি টেস্টিং অব লুথার অলব্রাইট’ এবং ‘ট্র্যাপস’ নামে দুটো বই প্রকাশিত হয়েছে তার। গত জানুয়ারিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এই দম্পতির বিচ্ছেদের খবর আসার পর জেফ বেজোসের গোপন প্রেমের খবর আসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
ফক্স টিভির সাবেক উপস্থাপিকা লরেন সানচেজের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই বেজোসের সংসার ভেঙেছে এমনটি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ট্যাবলয়েড ম্যাগাজিন সানচেজের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বেজোসের করা ব্যক্তিগত বার্তা প্রকাশ করে। কিন্তু বেজোস ওই ট্যাবলয়েডের প্রকাশক আমেরিকান মিডিয়া ইনকর্পোরেটেডের বিরুদ্ধে ব্লাকমেইল করার অভিযোগ করেন। অন্যদিকে প্রকাশক ব্লাকমেইল করার ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স
এসজেড