
আর মাত্র ২০ দিন পর ইংল্যান্ডের মাটিতে পর্দা উঠতে চলেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এবারের আসরের। অনেক তারকা ক্রিকেটার এবারের বিশ্বকাপ খেলেই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছেন।
শেষবারের ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজেদের জাত চেনানোর জন্য যারা মাঠে নামবেন, তাদের বিস্তারিত এক নজরে দেখে নিন।
ক্রিস গেইল:
গত ফেব্রুয়ারিতে সাত মাস বিরতির পর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরেছিলেন ক্যারিবীয়ান ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি খেলার পরই ঘোষণা দেন বিশ্বকাপের পর তিনি ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়ে দেবেন।
১৯৭৯ সালের পর আবারো বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলতে হলে ৪০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের উপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনেকাংশেই নির্ভর করতে হবে। ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৮৩ ম্যাচে ৫১টি ফিফটি এবং ২৫টি সেঞ্চুরিসহ ১০ হাজার ১৫১ রান করা গেইলের দানবীয় রূপ দেখতে তাই ইংল্যান্ডের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রত্যেকেই মন থেকে চাইছে।
জেপি ডুমিনি:
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর আর কখনোই ওয়ানডে ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে দেখা যাবে না জেপি ডুমিনিকে। যদিও এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার আপাতত টি-২০ ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন।
ইনজুরির কারণে অনেকদিন মাঠের বাইরে থাকার পর গত মার্চে দলে ফেরেন ডুমিনি। তখনই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে তিনি সরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কেপটাউনে খেলা ওয়ানডে ম্যাচকে দেশের মাটিতে খেলা শেষ একদিনের ম্যাচ বলে ডুমিনি ঘোষণা দেন।
ক্যারিয়ারে বারবার ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়া ডুমিনি ১৯৪ ওয়ানডে ম্যাচে ৫ হাজার ৪৭ রান করেছেন। আর মাত্র ছয়টি ম্যাচ খেললেই সপ্তম দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার হিসেবে ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলার কীর্তি গড়বেন।
ডেল স্টেইন:
স্টেইন গান নামে খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ডেল স্টেইনের হাত থেকে এখন আর আগের মতো আগুন ঝরানো গতিময় বল ছোড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। একের পর এক ইনজুরি তাকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে।
জাতীয় দলের হয়ে ১২৫টি ওয়ানডে ম্যাচে এখন পর্যন্ত ১৯৬টি উইকেট পাওয়া স্টেইন ঘোষণাই দিয়ে ফেলেছেন, ‘২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিজেকে ফিট রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপর আপনারা হয়তো আমাকে আর একদিনের ক্রিকেটে দেখতে পাবেন না। তাছাড়া এর পরের বিশ্বকাপে আমার বয়স ৪০ হবে।’
২০১৯ বিশ্বকাপেই নিজের শেষ ওয়ানডে টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়া স্টেইন ছন্দে থাকলে যেকোনো দলের ব্যাটসম্যানদের জন্যই তা ভয়ের কারণ হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা তাই একদিনের ক্রিকেটে স্টেইন গানের ঝলক দেখার অপেক্ষায় থাকবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ইমরান তাহির:
মাঠের পারফর্মেন্সের জন্য তো বটেই, উইকেট পাওয়ার পর পাখির ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার মতো দুই হাত নাড়িয়ে ভো দৌড় দিয়ে উদযাপনের জন্যও ক্রিকেটে আলোচিত এক নাম লেগ স্পিনার ইমরান তাহির। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে কম রান দিয়ে প্রতিপক্ষের উইকেট তুলে নিতে পটু তাহির জানিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের পর তিনি আর ওয়ানডে ক্রিকেট খেলবেন না।
দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৯ বছর বয়সী তারকা ক্রিকেটার তাহির ৯৫ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে পেয়েছেন ১৫৬টি উইকেট। ওয়ানডে থেকে তাহির অবসরের ঘোষণা দিলেও এখনই টি-২০ ক্রিকেট ছাড়ছেন না, খেলবেন আরও কিছুদিন।
ইংল্যান্ডের মাটিতে দেশের হয়ে শেষবারের জন্য বিশ্বকাপ মঞ্চে নিজের সেরাটা দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে চান ইমরান। বিশ্বকাপ খেলেই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে এ যুগের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার। বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে দেশের হয়ে শুধু মাত্র টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে খেলবেন তিনি।
শোয়েব মালিক:
গত বছর জুন মাসে জিম্বাবুয়ে সফরের আগে ২০১৯ বিশ্বকাপের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ ২০ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন বলে জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক। একইসঙ্গে ২০১৫ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়া মালিক এটিও জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২০ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের পর তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে চলে যাবেন।
ডানহাতে ব্যাটিং করার পাশাপাশি শোয়েব মালিকের কার্যকর অফস্পিন দলের জন্য কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। ফিল্ডার হিসেবেও তাকে মেধাবী বলা হয়ে থাকে। ২৮২টি ওয়ানডে খেলা মালিক পাকিস্তানের হয়ে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান ৭৪৮১ রান করেছেন। বল হাতে ১৫৬টি উইকেটের সঙ্গে নিয়েছেন ৯৬টি ক্যাচ।
উল্লেখিত খেলোয়াড়দের বাইরেও অনেক ক্রিকেটার আছেন, যারা ঘোষণা না দিলেও বয়স এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলে নিতে পারেন। এই তালিকায় আলোচিতদের মধ্যে যারা আছেন তারা হলেন- ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনিং ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা, পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ এবং শ্রীলঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গা।
আরআইএস