১৯৭৫ সাল থেকে ২০১৯। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সুদীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরের ইতিহাসে বহু কিংবদন্তী তারকা ক্রিকেটারদের উত্থান দেখেছেন বিশ্ববাসী। এই তারকাদের মধ্যে অনেকে যেমন নিজের ব্যাটিং শৈলীতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। তেমনি কেউ কেউ আবার নিজের বোলিং বৈচিত্র্যে রাজত্ব করেছে ২২ গজের পিচে। তবে খুব অল্প সংখ্যক তারকা আছেন যারা একই সাথে ব্যাটে-বলে সমান নৈপুন্য প্রদর্শনে বিস্মিত করেছেন বিশ্বকে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট বিশ্বের এমনই এক তারকার নাম, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার ও বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
এবারের বিশ্বকাপ আসরের শুরু থেকে প্রতিটি ম্যাচেই যেন সাকিব জানান দিয়ে চলেছেন, কেন তিনি বর্তমান বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। সেক্ষেত্রে বিগত ম্যাচগুলোতে ব্যাট হাতেই বেশি উজ্জ্বল ছিলেন সাকিব। কিন্তু গতকাল আফগানদের বিরুদ্ধে যে সাকিবকে দেখা গেল, সম্ভবত নিজেদের বিরুদ্ধে এই সাকিবকে প্রত্যাশা করবে না বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত কোনো ক্রিকেট পরাশক্তিও। বাংলাদেশের সেমির স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার এই ম্যাচে ব্যাট হাতে অর্ধশত রান করার পাশাপাশি বল হাতে প্রতিপক্ষের ৫ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে একাই এদিন আফগানদের ধসিয়ে দিলেন বাংলাদেশের 'সুপার ৭৫'। আর তাতে বাংলাদেশের ৬২ রানে জয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে গড়লেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এক বিরল রেকর্ড।
বিশ্বকাপের কোন ম্যাচে একই সাথে হাফসেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট শিকারে ভারতের তারকা অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংয়ের পর আরেক বাঁহাতি অলরাউন্ডার হিসেবে এবার ইতিহাসে নিজের নাম লেখালেন টাইগার সাকিব। বিশ্বের দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই রেকর্ডের অধিকারী হলেন তিনি। এর আগে দেশের হয়ে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে, ঘরের মাঠে আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম এই অনন্যা মাইলফলক স্থাপন করেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গন থেকে অবসরে যাওয় ভারতীয় তারকা অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং। সে ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করার পাশাপাশি বল হাতে ৫ উইকেট তুলে নেন যুবরাজ।
তবে পরিসংখ্যান হিসেবে এই দুই তারকার মাঝে এগিয়ে থাকছেন সাকিবই। কারণ আইরিশদের বিরুদ্ধে সে ম্যাচে ব্যাট হাতে ৭১ বলে ৫০ রানের একটি ইনিংস খেলার পাশাপাশি বল হাতে ৩১ রান খরচে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন যুবরাজ।
আর গতকাল আফগানদের বিরুদ্ধে নিজের অর্ধশতক পূরণে সাকিব খেলেছেন যুবরাজের চেয়ে দুই বল কম, অর্থাৎ ৬৯ বলে ৫১ রান। অপরদিকে, নিজের ৫ উইকেট শিকারেও যুবরাজের চেয়ে সাশ্রয়ী ছিলেন সাকিব আল হাসান। ১০ ওভার বল করে ১ মেডেনসহ ২৯ রান খরচে ৫ উইকেট শিকার করেন তিনি। এছাড়া বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে সহস্রাধিক রান সংগ্রাহক এবং কোন বিশ্বকাপ আসরে তিন ম্যাচে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হওয়ার বিরল রেকর্ডও গড়েন এই টাইগার অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশ-আফগান ম্যাচ শেষে ক্রিকবাজের এক লাইভ অনুষ্ঠানে সাকিব সম্পর্ক মন্তব্য করতে গিয়ে ভারতের তারকা বোলার জহির খান বলেন, 'ব্যাটসম্যান সাকিব বা বোলার সাকিবের বিরুদ্ধে আপনি হয়তো কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করতে পারেন। কিন্তু অলরাউন্ডার সাকিবের বিভীষিকার কাছে পর্যুদস্ত হওয়া ছাড়া আপনার আর কিছুই করার থাকবে না। এবারের বিশ্বকাপে অনেক দলই সাকিবের ব্যাটিং আগ্রাসনের মুখে পড়ছে। কিন্তু আমি দুঃখিত বোধ করছি, আজ অলরাউন্ডার সাকিবের দিনেই বাংলাদেশের সামনে পড়েছিলো আফগানিস্তান। ওরা স্রেফ ধসে গেছে। ওর বাইরের চেহারা দেখে ধারণাও করা সম্ভব নয় দলের জয়ের জন্য ও কোন মাত্রায় আগ্রাসি হয়ে উঠতে পারে।'
ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আসরে নিজেদের শেষ দুইটি ম্যাচ সেমির পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টাইগারদের জন্য। সমর্থকদের প্রত্যাশা, সেমিতে খেলার স্বপ্ন পূরণের মধ্যদিয়ে সাকিবের এই মাস্টার ক্লাস পারফর্মেন্সের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে লাল-সবুজের বাহিনী। তবে ক্রিকেটবোদ্ধারা বলছেন, এই বাংলাদেশ দল যদি সেমিতে পা রাখে তবে সেখানেই তাদের পথ চলা শেষ হবে কিনা তা বলা সত্যিই কঠিন।