• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০১৯, ০৮:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২, ২০১৯, ০৮:২৫ পিএম

এই টাইগারদের সামনে ৩১৫ খুব বড় লক্ষ্য নয়

এই টাইগারদের সামনে ৩১৫ খুব বড় লক্ষ্য নয়

দুর্দান্ত শুরুর পর ভারতীয় দলের শেষের দিকে এসে লেজে গোবরে অবস্থা এই প্রথম নয়। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকে খালি চোখেই ধরা পড়ছিল তা। দলে বিশ্বসেরা টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা থাকলেও, তুলনামূলক খর্ব শক্তির মিডল অর্ডারে ভরসা করেই বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে তারা। ভারতের মিডল অর্ডার যে কতটা দুর্বল তা আজ আরও একবার প্রমাণ করে দিলো বাংলাদেশ দল। তাতে অবশ্য অখুশি হওয়ার কিছু নেই। বরঞ্চ বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য এ যেন আনন্দের সংবাদ। 

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জিততেই হবে নইলে টেকা যাবে না সেমিফাইনালের দৌড়ে- এমন সমীকরণ নিয়েই এজবাস্টনে খেলতে নামে বাংলাদেশ। টস হারে বোলিংয়ে নামতে হয় টাইগারদের। মাশরাফী প্রথম ওভারে ১০ রান দিয়েই ব্যাকফুটে। দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে আসেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অন্যপ্রান্তে মাশরাফীর পরিবর্তে মুস্তাফিজুর রহমান। ভারতের বিপক্ষে সবসময়ই সফল মুস্তাফিজ এদিনও করেন দারুণ শুরু। ফলাফল অস্বস্তি থেকে বেরোতে মুস্তাফিজের খাটো লেন্থে ফেলা ডেলিভারি উড়িয়ে লেগ স্কয়ারের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা রোহিতের। তবে ব্যাটে-বলে টাইমিং না হওয়ায় উঠে যায় ক্যাচ। কিন্তু দলের সেরা ফিল্ডার তামিম ইকবাল সবাইকে হতাশ করে ফেলে দেন সহজ ক্যাচ। 

সেই যে রোহিতের শুরু, জীবন পেয়ে যেন আর থামা নেই। একে একে রুবেল-সাকিব-সাইফ-মুস্তাফিজদের কচু-কাটা করতে থাকেন। তার ওপেনিং সঙ্গী লোকেশ রাহুলও যোগ দেন রান তোলার মিছিলে। তামিমের সেই ভুলে রোহিতের ইনিংস থামে ১০৪ রানে। তাও পার্ট-টাইমার সৌম্য সরকারকে দিয়ে ব্রেক-থ্রুটি বের করে আনেন অফ-ফর্মে ভোগা মাশরাফী। ভারতের দলীয় স্কোর তখন ১৮০। ওভার ২৯.২! তাদের সমর্থকরা তখন স্বপ্নে মগ্ন ৪০০ রানের দলীয় সংগ্রহ পাওয়ার। 

কিন্তু রোহিতকে ফেলে দিয়েই ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরতে শুরু করে টাইগাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেটও পেটে থাকে বোলাররা। শুরুর দিকে খাপছাড়া বোলিং ৩০ ওভারের পর অনেকটা শুধরে নেয় বোলাররা। ফলে এক সময় বড় শট খেলতে হাঁসফাঁস শুরু করে কোহলি-রাহুলরা। 

তবে ইনিংসের টার্নিং পয়েন্ট নিঃসন্দেহে মুস্তাফিজের ৩৯তম ওভারটি। ওই ওভারে মেইডেন দিয়ে কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়ার মতো দুই ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ। এরপর সাকিবও যোগ দেন উইকেট নেয়ার মিছিলে। দারুণ খেলতে থাকা তরুণ পন্থকে স্পিন ঘূর্ণিতে বোকা বানান । ইনিংসের শেষ ওভারগুলোতে যেন সেই শুরুর দিকে মুস্তাফিজকে খুঁজে পায় বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকরা। একের পর এক কাটারে বাঁহাতি এই পেসার নাজেহাল করতে থাকে ভারতীয় লেট অর্ডারকে। শেষ ওভারেও ধোনির উইকেটসহ মোট ২ উইকেট পান তিনি। তাও মাত্র ২ রান খরচায়। 

মোট ৫৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজ। যা সাকিবের পর বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেরা বোলিং। আর সেই সেরা বোলিংয়ের সুবাদেই ভারত একসময় ৪০০ রানের দলীয় সংগ্রহ দেখলেও ৩১৪ রানেই আটকে যায়। 

সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখতে টাইগারদের এখন প্রয়োজন ৩১৫ রান। পারবে কি বাংলাদেশ? পারবে কি তামিম-সাকিবরা সেমির স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে? 

তামিম ইকবালকে আজ নিতে হবে বড় দায়িত্ব

নয় কেন? বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অতীতই কথা বলছে বাংলাদেশ এই লক্ষ্য ছোঁয়ার সামর্থ্যও এখন রাখে। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৩০০র অধিক রান তাড়া করতে নেমে জয়ের রেকর্ড নেই আর কারও, শুধুমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টনটনে ৩২২ রান তাড়া করতে নেমে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। তাও আবার হাতে প্রায় ৯ ওভারের মতো রেখে। তো আজকের লক্ষ্য তো আরও একটু কম। 

এদিকের টনটনের উইকেট আর মাঠ এবং এজবাস্টনের উইকেট আর মাঠের মধ্যে নেই তেমন কোনো সম্পর্ক। আয়তনে ছোট, ব্যাটিং সহায়ক। তবে জয় এই কারণগুলোতেই আপনা-আপনি চলে আসবে না। তার জন্য বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা পেতে হবে। তামিম ইকবালকে তার অফ-ফর্মকে দূরে ঠেলে দিয়ে খেলতে হবে নিজের স্বাভাবিক খেলা। আর সৌম্যর কাজ হবে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়ার। মারমুখী ব্যাটিং করে শুরুতেই বুমরাহ-শামি-ভুবিদের চাপে না ফেললে ভোগান্তি পোহাতে হবে টাইগারদেরই।  

আর তিনে নামা সাকিবকে বরাবরের মতো আজও আস্থার প্রতিদান দিতে হবে। জয়ের জন্য দলকে ভীত গড়ে দেয়ার দায়িত্ব থাকছে তার কাঁধেই। মুশফিককেও আরও একবার প্রমাণ দিতে কেন তাকে মিস্টার ডিপেন্ডেবল বলা হয়। বাংলাদেশের জন্য আস্থার খবর সাব্বির ও মোসাদ্দেকের একাদশে থাকা। সাব্বির ফর্মে না থাকলেও তার দুর্দান্ত ফিনিশিং আর আগ্রাসী ব্যাটিং প্রয়োজনীয় রান রেট ধরে রাখতে সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে মোসাদ্দেকের হাতখোলা ব্যাটিংও দরকারে বাংলাদেশকে রান রেট ধরে রাখতে সহয়তা করবে। 

শুধু এবারের বিশ্বকাপেই না। এর আগের বিশ্বকাপেও ৩০০ এর অধিক বড় লক্ষ্য তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। নেলসনে ২০১৫ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের খেলায় স্কটল্যান্ডের ৩১৯ রানের লক্ষ্য সফলভাবে ছোঁয় বাংলাদেশ। এ ছাড়াও ওয়ানডে ক্রিকেটে আরও দুবার ৩০০+ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের ছুঁড়ে দেয়া ৩১৩ রানের লক্ষ্য সফলভাবে চেস করে বাংলাদেশ। আর ২০১৩ সালে ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৮ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে টাইগারদের। 

সুতরাং, স্কোরবোর্ডে ৩১৫ রান দেখেই ভড়কে যাওয়ার কিছু নেই। যেহেতু এর আগেও বাংলাদেশ ৩০০র অধিক রান তাড়া করে জিতেছে, সেহেতু সমর্থকরা আজও আশায় বুক বাঁধতে পারে আরও একটি ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হওয়ায়। আর বাংলাদেশের পিঠ যেহেতু দেয়ালে ঠেকে গেছে সেহেতু জয় পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই চালাবে দল। কেননা আহত বাঘ আরও হিংস্রভাবে তার শিকারকে শিকার করে।

এমএইচএস