৯ ম্যাচের সাতটিতেই জয়, ১ ম্যাচ পরিত্যক্ত, শুধু স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে হার; বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ভারতের যাত্রাটাই বলে দিচ্ছে, কেন তারা এবারের টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট। জয় পরাজয়ের অনুপাতে অন্য সব দলের থেকেই পরিষ্কার এগিয়ে আছে টিম ইন্ডিয়া।
মঙ্গলবার (৯ জুন) নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ভারত। গ্রুপ পর্বে ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় এবারের বিশ্বকাপের হেড টু হেডে অন্তত কাউকেই এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা বাদ দিলে পুরো রাউন্ড রবিন লীগ জুড়েই ভারতীয় ব্যাটিং পারফরম্যান্স ছিল এক কথায় অসাধারণ। আর তাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওপেনার রোহিত শর্মা। বিশ্বকাপে খেলতে নামা আট ইনিংসে রোহিতের সেঞ্চুরি সংখ্যা ৫টি। এখন পর্যন্ত রান করেছেন ৬৪৭!
শচীন টেন্ডুলকারের এক বিশ্বকাপে ৬৭৩ রানের রেকর্ড ভাঙাটা এখন রোহিতের পক্ষে কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। তার কারণেই বড় মঞ্চের ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ানের অভাবটা টেরই পায়নি ভারতীয় দল। ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি এখন পর্যন্ত কোনো শতক হাঁকানোর সুযোগ পেলেন না কেবল ওপেনিংয়ে নেমে রোহিতের দীর্ঘ সময় ব্যাটিংয়ের কারণে। তারপরও কোহলি কম যাননি, ৮ ইনিংসে ৪৪১ রানের পরিসংখ্যানকে খারাপ বলবেন, এমন কেউ কি আছেন!
তবে চিন্তা আছে ভারতের মিডল অর্ডার নিয়ে। কেদার যাদব, মহেন্দ্র সিং ধোনি, ঋষভ পন্থ, হার্দিক পান্ডিয়াদের ব্যাট থেকে এখনো তেমন কোনো অতিমানবীর পারফরম্যান্সের দেখা মেলেনি। যে কারণেই হয়তো এবারের বিশ্বকাপে ৪০০ রানের স্কোর গড়া এখনো সম্ভব হয়নি ভারতের, যেখানে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দুই বার পৌঁছেছিল ৪০০'র কাছাকাছি।
ভারতীয় ব্যাটিংয়ের এত স্তুতির মাঝে তাদের বোলিংটাকেও খাটো করে দেখা যাবে না মোটেও। তাদের পেস বোলিং লাইনআপটা এক কোথায় দুর্দান্ত। ১৭ উইকেট নিয়ে জসপ্রিত বুমরাহ আছেন সেরা উইকেট শিকারির তালিকায় ৩ নম্বরে। তবে শুধু উইকেট দিয়ে বুমরাহর বিচার করা হবে বোকামি, ডেথ ওভারে তিনি যেন একটা ইয়র্কার মেশিন বনে যান! অন্যদিকে মাত্র ৪ ম্যাচ খেলেই ১৪ উইকেট ঝুলিতে পুরে নিয়েছেন মোহাম্মদ শামি। ৫ ম্যাচে ভুবনেশ্বর কুমারের উইকেট সংখ্যা ৭, তবে করে গেছেন ইকোনমিকাল বোলিং। মিডল ওভারে প্রায় নিয়মিতই উইকেট এনে দিচ্ছেন অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া।
টুর্নামেন্টে যাত্রা :
প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শুভ সূচনা করে টিম ইন্ডিয়া। যুজবেন্দ্র চাহালের ৫১ রানে ৪ উইকেট শিকারে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে থামে শুরুতে ব্যাট করা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। জবাব দিতে নেমে রোহিত শর্মার অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংসে সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ভারত।
পরের ম্যাচেই ভারতের সামনে পড়ে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। শুরুতে ব্যাট করে শিখর ধাওয়ানের সেঞ্চুরি, বিরাট কোহলির ৮২ ও হার্দিক পান্ডিয়ার ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৩৫২ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় ভারত। জবাব দিতে নেমে ভুবনেশ্বর ও বুমরাহর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া থামে জয় থেকে ৩৬ রান দূরে।
তৃতীয় ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরিত্যক্ত হয়। তবে এ ম্যাচের আগেই ভারত পায় শিখর ধাওয়ানের ইনজুরির দুঃসংবাদ। পরের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানের ৮৯ রানের বড় জয় পায় বিরাট কোহলির দল। সেই ম্যাচেও ১৪০ রান করে ম্যাচসেরা হন রোহিত।
তবে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলতে দারুণ কষ্টই হয়েছিল ভারতের। হ্যাম্পশায়ারে ওইদিন শুরুতে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে সর্বসাকুল্যে মাত্র ২২৪ রান করে ভারত। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তবে মোহাম্মদ শামির বোলিং তোপে সেদিন পার পেয়ে যায় ভারতীয়রা। টুর্নামেন্টের প্রথম হ্যাট্রিকটা ওইদিনই তুলে নিয়েছিলেন শামি, ৪০ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। ভারতও ম্যাচটা জিতে যায় ১১ রানে।
পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও শুরুতে ব্যাট করে ৩০০ পেরোতে ব্যর্থ হয় ভারত। তবে এবারো মোহাম্মদ শামির ১৬ রানে ৪ উইকেটের বোলিং তোপে ১৪৩ রানেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা।
আর এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে এসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পায় ভারত। যদিও ৩৩৮ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করে মহেন্দ্র সিং ধোনির স্লো ব্যাটিংকে দুষেছেন অনেকেই। শেষমেশ ওই ম্যাচে ৫ উইকেটে ৩০৬ রানে থামে ভারত। রোহিত তুলে নিয়েছিলেন এবারের বিশ্বকাপে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি।
পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে সামনে পায় ভারত। রোহিত-রাহুলের ওপেনিং জুটিতে উড়ন্ত সূচনা পেলেও শেষদিকে বাংলাদেশী বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৩১৪ রানেই থেমে যায় তারা। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ২৮ রানের পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।
আর রাউন্ড রবিন লীগের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দেয়া ২৬৫ রানের টার্গেট এবারের বিশ্বকাপে লোকেশ রাহুলের প্রথম ও রোহিতের পঞ্চম সেঞ্চুরিতে হেসে খেলেই পার করে টিম ইন্ডিয়া।
এমএইচএস/এসএইচএস