• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০১৯, ০৯:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৫, ২০১৯, ০৯:৪৬ পিএম

অভাগা ‘উইলিয়ামসন’ যেন দুর্ভাগা ‘মেসির’ প্রতিচ্ছবি

অভাগা ‘উইলিয়ামসন’ যেন দুর্ভাগা ‘মেসির’ প্রতিচ্ছবি
বিশ্বকাপের সামনে বিমর্ষ ফুটবল ও ক্রিকেট অঙ্গনের দুই মহারথী - ফাইল ফটো

এ কথা সত্যি যে, সাফল্যের জন্য একজন ব্যক্তির সামর্থ্য আর যোগ্যতার কোন বিকল্প নেই। তবে তার সেই সামর্থ্য আর যোগ্যতার সঠিক সমন্বয়ের পাশাপাশি, সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে রেখে চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সহায়ক হিসেবে প্রয়োজন হয় ভাগ্যের। আর এখানেই যেন বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে পৃথিবীর বহু সুযোগ্যের প্রাপ্তির স্বপ্ন। 

রোববার (১৪ জুলাই) এমনই এক ভাগ্যাহতের পরাজয় দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। আর ঠিক ৫ বছর আগে ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই, আরেক সুযোগ্যের স্বর্গ পতনের নির্মম ইতিহাস রচির হয়েছিল ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামে, বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচে। 

ক্রীড়াঙ্গনের এই দুই আসরের দুইটি মহাকাব্যিক ফাইনালে পরাজয় বরণের পর পরাজিত দুই দলের দুই তারকাকে নিয়ে বেশ গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছে, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক উইলিয়ামসন কি তবে ক্রিকেট বিশ্বের লিওনেল মেসি? আর এ তুলনা হবে নাই বা কেন! রীতিমত কালের প্রতিচ্ছবিই তো দেখা গেল। এ যেন সময়ের পুনরাবৃত্তি! প্রেক্ষাপট, ব্যক্তি আর ক্ষেত্র বিবেচনায় একে অন্যের চেয়ে হয়তো ভিন্ন। কিন্তু ভাগ্য বিভ্রাটের নির্মমতার কথা যদি বলা যায়, তাহলে বলতেই হয়, উইলিয়ামসন গতকাল কোন ক্ষেদের অনলে পুড়েছেন তা হয়তো একমাত্র অনুভব করতে পারবেন আর্জেন্টাইন ফুটবল বিস্ময় লিওনেল কুচিত্তিনো মেসি।

চলুন তবে জেনে নেয়া যাক কীভাবে 'ভাগ্যাহত সহদোর' হয়ে উঠলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল দলের অধিনায়ক ও তারকা ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি এবং নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও তারকা ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন।

ব্যক্তিত্বের দিক থেকে যথেষ্ট মিল রয়েছে নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও আর্জেন্টাইন জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসির মাঝে। শুধু তাই নয়, দেখতেও একেবারে যেন সহদোর ভাই। দু'জনেই বয়সের তুলনায় যথেষ্ট পরিণত, শান্ত স্বভাবের মানুষ। তবে পেশাদারিত্বের দিক থেকে শতভাগ নিবেদিত। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চেষ্টার সর্বোচ্চটুকু নিংড়ে দেয়ার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু স্ব-স্ব ক্ষেত্রে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসরে তীরে তরী ডুবেছে তাদের। সে হিসেবে বলা চলে 'হতভাগা সব এক গাঁয়ের'ই বটে।

লিওনেল মেসি: প্রেক্ষাপট ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল ২০১৪

ব্রাজিলের মাটিতে অনুষ্ঠিত ২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপের কথা কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। বিশেষ করে আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের জন্য তো নয়ই। তারকা সমৃদ্ধ সে দলটি শক্তিশালী হলেও বিশ্বকাপের মঞ্চে ঠিক সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। তাই রীতিমত 'ওয়ান ম্যান আর্মি'র মত গ্রুপ পর্ব থেকে প্রায় প্রতিটি খেলায় দলকে একাই টেনে নিয়ে যান ফুটবলের খুদে যাদুকর হিসেবে পরিচিত, সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার মেসি। তার নেতৃত্বে এক পা এক পা করে ঠিকই আসরের ফাইনালে পৌঁছায় আর্জেন্টিনা। 

ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে একাই বল টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মেসি - ছবি : টুইটার 

মধ্যমাঠ থেকে আক্রমনভাগ, সর্বত্র নিজের সরব উপস্থিতি জানান দিয়ে যাওয়া মেসি শেষ অবদি প্রত্যাশিত সাফল্যর নাগাল পাননি। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ জার্মানির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়ে যাওয়া আর্জেন্টিনা দল হার মানে অতিরিক্ত সময়ের অন্তিম মুহূর্তে জার্মান মিডফিল্ডার মারিও গোৎজের করা একমাত্র গোলে। এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় একেবারে সহজ সুযোগ পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হওয়া হিগুইয়েনের সেই পা পিছলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাত থেকে ম্যাচ ফসকে যায় মেসিদের। আর আরেকটি গোল তো কাটা পরে রেফারি অফসাইড ডাকায়। 

বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েও বিমর্ষ লিওনেল মেসি - ছবি : ইন্টারনেট 

দলের পক্ষে দুর্দান্ত পারফরম করা অধিনায়ক মেসি সে আসরের সেরা তারকা নির্বাচিত হলেও বিশ্বকাপের সোনালী কাপটা ছুঁয়ে দেখার ভাগ্য হয়নি তার। সে বিশ্বকাপের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী একটি ছবি হিসেবে ফুটবল দুনিয়া তোলপাড় করে, বিমর্ষ বদনে বিশ্বকাপ ট্রফির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তার দিকে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকা মেসির সেই মুখ। একেবারে তার আঙুল ছুঁয়ে যেন বেড়িয়ে যায় সে স্বপ্ন, যা মুঠোবন্দি করতে গিয়ে শুধুই শূন্যে হাতরে বেড়ান মেসি!

আর এরপরেই মেসির সেই 'রিক্তের বেদন'-এ যাতনার চূড়ান্ত বিব্রতি যোগ হয় টানা দুইটি কোপা আমেরিকা কাপের ফাইনালে চিলিয়ানদের বিরুদ্ধে হেরে রূপালি স্বপ্ন বিলিয়ন হয়ে। 

> কেন উইলিয়ামসন: প্রেক্ষাপট ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল ২০১৯    

রোববার ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসির মতন একই নিষ্ঠুরতার বাণে জর্জরিত হয়েছে নিউজিল্যান্ড ও তার অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সঙ্গে কিউইদের ফাইনাল ম্যাচে যে মহাকাব্যিক ইতিহাস রচিত হলো তা ক্রিকেট দুনিয়ার জন্য অভূতপূর্ব! টান টান উত্তেজনার এই ফাইনাল ম্যাচের ভাগ্যও নির্ধারন করা হয় অতিরিক্ত সময়ের খেলায় অর্থাৎ সুপার ওভারে। শেষ পর্যন্ত সুপার ওভারে বাউন্ডারিতে আসা রান সংখ্যার অদ্ভুত এক সমীকরণে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছে কেন উইলিয়ামসনের দল। অথচ টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই বারংবার ব্যর্থ হওয়া দলের ব্যাটিং টপ অর্ডারের ভার কাধে নিয়ে ম্যাচের পর ম্যাচ দলকে জয়ের বন্দরে পোঁছে দেয়া কেন উইলিমসনের প্রাপ্তি শূন্য সাড় হিসেবের খাতা!

এবারের বিশ্বকাপের প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডার সামলাতে দেখা যায় কেন উইলিয়ামসনকে - ছবি : টুইটার 

টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনাল হারের গ্লানি নিয়ে সত্যিই এদিন মাথায় শোকের কালো টুপি চড়িয়েই বাড়ি ফিরে গেছে 'ব্ল্যাকক্যাপস' খ্যাত নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। আর মন ভেঙে নির্বাক সেই প্রস্থানের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে নিয়েছেন উইলিয়ামসন। তবে যেতে যেতে তারা রেখে গেছে স্পোর্টসম্যানশিপের অনন্য নজির; যা শুধু ক্রিকেট কেন, যেকোনো খেলার যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ইতিহাসে। 

অপলক দৃষ্টিতে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফির দিকে চেয়ে আছেন উইলিয়ামসন - ছবি : টুইটার 

শুধু তাই নয় অসাধারণ পারফরম্যান্স এবং নেতৃত্বের গুণে বিশ্বের বহু বাঘা বাঘা তারকাদের পেছনে ফেলে দলের অধিনায়ক উইলিমসন জিতে নিয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরার সম্মানও। কিন্তু এদিন আরও একবার সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতরণ ঘটে, যখন ভারতীয় ব্যাটিং জিনিয়াস শচিন টেন্ডুলকারের হাত থেকে টুর্নামেন্ট সেরার উপহার বুঝে নিয়ে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটকে পাশ কাটিয়ে যান উইলিয়ামসন। 

সেই একই বিমর্ষতায় ভারাক্রান্ত দেহ, সেই একই শূন্যতা চোখে মুখে। মুঠোয় ধরে সোনালী ট্রফিটাকে বাতাসে ছুঁড়ে দিয়ে মাতাল উদযাপনের সেই লগ্নহারা কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, ঠিক যেন ২০১৪ সালের সেই ভাগ্যাহত আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসির জীবন্ত প্রতিচ্ছবি! 

এসকে/এসএইচএস 

আরও পড়ুন