
গত ২৬ জুলাই দৈনিক জাগরণে প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- দেশসেরা ফুটবলার সিহাব এখন ভ্যানচালক! সেই সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছিল, ২০১৭ সালে প্রাথমিক স্কুল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলে দেশসেরা খেলোয়াড় সিহাব উদ্দিনের এখন কেউ খোঁজ নেয় না। টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার পেলেও, অনেকটা অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে প্রতিভাবান এই ক্ষুদে ফুটবলার।
সেই বিস্তারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- দারিদ্রতার কষাঘাতে ফিকে হয়ে গেছে তার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। সংসারের হাল ধরতে বন্ধ হয়ে গেছে তার লেখাপড়া। কখনও ভ্যান চালিয়ে, আবার কখনও দিনমজুর হয়ে কাজ করে চলছে তার সংগ্রামী জীবন।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি পরবর্তীতে একাধিক গণমাধ্যমগুলোও সিহাব উদ্দিনকে নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। তাতে করে বিষয়টি অনেকেরই নজরে চলে আসে। আর তাতেই দুর্ভাগা সিহাবের কপাল খুলে যায়।
ফুটবল ছেড়ে দিনমজুর বনে যাওয়া সিহাব উদ্দিনের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে আলোর দিশা এনে দিয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে সদ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া বসুন্ধরা কিংস। আপাতত তাকে ট্রায়ালে রাখার সিদ্ধান্ত ক্লাব নিয়ে রাখলেও খুব জলদি তাকে বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ করে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বসুন্ধরা কিংসের প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতা জানাতে মোটেও ভুলে যাননি সিহাব। চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে খেলোয়াড়ি জীবনে নিজের মায়ের অসামান্য ভূমিকার কথা স্মরণ করতে গিয়ে এই বিস্ময় বালক আবেগ ধরে রাখতে না পেরে চোখের জলে ভেসে যান। কারণ ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নামেন্টের আগে তার মা চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
মা হারানোর বেদনা কাটিয়ে ওঠার আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন সিহাবের বাবা কোরবান আলী। তাই চিকিৎসা ব্যয় ও পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে সিহাবের কাঁধে।
সিহাবের এমন কষ্টের জীবনের কথা জানতে পারার পর বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ইমরুল হাসানের হৃদয়ে তা নাড়া নেয়। ফলাফল, এখন আর ভ্যান চালিয়ে নয়, ক্লাবের মাঠে ফুটবল নিয়েই এখন প্রতিভাবান এই ক্ষুদে ফুটবলারের সময় অতিবাহিত হচ্ছে।
নিজের পরিবারের মুখে আবারো হাসি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ক্লাবের আর দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে উন্মুখ হয়ে থাকা কিশোর এই ফুটবলার বলেন, সবার কাছে আমি দোয়া চাই যাতে আমি নিজের পরিবারকে কিছু দিতে পারি। আমি যেন বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনতে পারি।
আরআইএস