
ইউরো বাছাইপর্বের ম্যাচ চলাকালীন সময়ে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে মাঠে ইংল্যান্ড দলের ফুটবলাররা বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় প্রথমার্ধে রেফারি দুইবার খেলা বন্ধ করতে পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাতে বুলগেরিয়ার মাঠে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে ইংল্যান্ড ৬-০ গোলের বড় জয় পেলেও ফলাফল ছাপিয়ে স্বাগতিক দর্শকদের বর্ণবাদী আচরণই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
খেলার ৭ মিনিটেই রস বার্কলের পাসে বল পেয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে গোল করে ইংলিশদের লিড এনে দেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। ২০ মিনিটের মাথায় রাহিম স্টার্লিংয়ের পাসে বল আদায় করে বার্কলে লক্ষ্যভেদ করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।
২৮ মিনিটের মাথায় ইংলিশ ডিফেন্ডার টাইরন মিংস গ্যালারি থেকে বর্ণবাদী মন্তব্য শুনতে পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি অধিনায়ক হ্যারি কেইনকে অবহিত করেন। রেফারি ইভান বেবেকের সঙ্গে কেইন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় রেফারি বেশ বেশ কয়েক মিনিটের জন্য খেলা বন্ধ রাখেন। এ সময় স্টেডিয়ামে থাকা দর্শকদের উদ্দেশ্য করে ঘোষণাও দেয়া হয়, এমন কাজ আবারও করলে ম্যাচ বাতিলও করা হতে পারে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর খেলা শুরু হলে ৩২ মিনিটের সময় হ্যারি কেইনের ক্রসে বল পেয়ে ডি বক্সের ভেতর থেকে হেডে বল জালে জড়িয়ে বার্কলে আবারো গোল করেন।
ম্যাচের ৪৩ মিনিটের মাথায় বুলগেরিয়ার কিছু দর্শক ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের লক্ষ্য করে ‘নাৎসি স্যালুট’ দিতে থাকে। কালো হুডি পরা কয়েকজন দর্শক এমন বিতর্কিত স্যালুট বারবার দিয়ে খেলার পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছিল। এ সময় ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটকে রেফারির সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। রেফারি দ্বিতীয় দফায় খেলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হন।
পরে খেলা আবারো শুরু হলে প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ের চতুর্থ মিনিটে হ্যারি কেইনের পাসে বল পেয়ে ডি বক্সের একদম কাছ থেকে ডান পায়ের শটে রাহিম স্টার্লিং গোল করেন।
প্রথমার্ধ শেষে মাঠ ছাড়ার সময় ঘরের মাঠের সমর্থকের বর্ণবাদী আচরণের জেরে তাদের সঙ্গে খোদ বুলগেরিয়া অধিনায়ক ইভেলিন পোপভের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে।
বিরতির পর ৬৯ মিনিটের সময় কেইনের বাড়ানো বল নিয়ে ডি-বক্সের ভেতর অনায়াসে আবারো বল জালে পাঠান স্টার্লিং। ৮৫ মিনিটে এসে ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন নিজেও গোলের দেখা পেলে বুলগেরিয়াকে বিধ্বস্ত করেই মাঠ ছাড়ে অতিথিরা।
সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্ণবাদের ইস্যু গরম খবরে পরিণত হয়। ম্যাচের পর ইংলিশ ফুটবলাররা নিজেদের টুইটারে বুলগেরিয়ার দর্শকের এমন আচরণের কঠোর সমালোচনা করেছেন ।
স্ট্রাইকার রাহিম স্টার্লিং তার টুইটারে লিখেছেন, ‘বুলগেরিয়ার জন্য খারাপ লাগছে, তাদের স্টেডিয়ামে এমন গর্দভ দর্শক খেলা দেখতে আসে। ৬-০ তে জিতে আমরা আমাদের কাজটা করেছি। আমাদের সমর্থকরা নিরাপদে সফরটা করে গেছে, তাদের অভিনন্দন।’
জেসে লিনগার্ড লিখেছেন, ‘যারা সুন্দর খেলাটাকে নষ্ট করতে চায়; ইংল্যান্ডের সবাই তাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। উয়েফার উচিৎ এই ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।’
মার্কাস র্যাশফোর্ড লিখেছেন, ‘এরকম পরিস্থিতিতে খেলা সহজ কাজ নয়। ২০১৯ সালে এমনটা হবে, সেটা মেনে নেয়া যায় না। এমন প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা তিন পয়েন্ট পেয়েছি। কিন্তু এসব বন্ধ করতে হবে।’
তবে বুলগেরিয়া কোচ কাসেমির বালাকোভ বলছেন, তিনি বর্ণবাদী কোনো মন্তব্যই শুনতে পাননি! তিনি বলেন, ‘আমি ব্যাক্তিগতভাবে এরকম কিছু শুনিনি। আমি দেখেছি রেফারি ম্যাচ বন্ধ রেখেছেন। আর শুধু বুলগেরিয়ার দর্শকই নয়, ইংল্যান্ডের সমর্থকরাও শিষ দিচ্ছিল বুলগেরিয়ার জাতীয় সঙ্গীতের সময়। দ্বিতীয়ার্ধে তারা আমাদের সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে অনেক কিছুই বলেছেন যা আমার পছন্দ হয়নি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের সবার মনোযোগটা ফুটবলেই ছিল। যদি সত্যিই বর্ণবাদের মতো কিছু হয়ে থাকে, তাহলে সেটার জন্য আমরা দুঃখিত। বুলগেরিয়ার ফুটবল এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’
আরআইএস