
মাত্র কয়েকদিন আগেই এক উড়োচিঠির মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ টি-টুয়েন্টি সিরিজে হামলার হুমকি প্রদান করলো ভারতীয় একটি চরমপন্থি জঙ্গি সংগঠন। অপরদিকে, মাত্রাতিরিক্ত বায়ু দূষণের ফলে দিল্লিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কায় এরইমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শহরের সকল স্কুল, কমিয়ে আনা হয়েছে অফিসের সময়।
দিল্লি কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা বিনামূল্যে জনগণের মধ্যে ৫০ লাখ মাস্ক বিতরণ করবে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, দিল্লি এখন কার্যত একটি গ্যাসচেম্বারে পরিণত হয়েছে।
ঠিক এমনই এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে ভারতে সিরিজ খেলার জন্য দিল্লিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। গত বৃহস্পতিবার থেকে সেখানকার অরুণ শাহ জেটলি স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরু করেছে ক্রিকেটাররা। আর এরই মধ্যে তাদের ভোগাতে শুরু করেছে দিল্লির বিষাক্ত বাতাস। এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেই আগামীকাল ৩ নভেম্বর সিরিজের প্রথম টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও ভারত।
প্রাণঘাতি হামলা নাকি বিষাক্ত বায়ু, মাঠের প্রতিপক্ষ নাকি নিজের মন; একসঙ্গে বহুভুজী অস্ত্রধারী যোদ্ধার মতো রণাঙ্গণে নামতে হবে টাইগারদের।
অনেকেই স্বীকার করেছেন, দিল্লিতে এখন যে পরিবেশ তার মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। দিল্লির বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে লেখা খোলা চিঠিতে ম্যাচটির ভেন্যু পাল্টানোর জন্য অনুরোধ করেছিল। কারণ এমন পরিবেশে খেলাটা দীর্ঘমেয়াদে খেলোয়াড়দের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।
অনুশীলনরত বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফ, সকলেই আপত্তি তুলছেন এই পরিস্থিতি নিয়ে। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা মাস্ক পরিহিত অবস্থায় অনুশীলন করলেও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
দলের কোচিং স্টাফ সূত্রে জানা যায়, এরকম পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়রা বিব্রত; নিঃশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে। এভাবে অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া বা ম্যাচ খেলাটা তাদের স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। যার ফলে সফরের বাকি সময়টায় শারিরীকভাবে খারাপ অনুভূত হতে পারে। এ অবস্থায় খেলার উপরেও খারাপ প্রভাব পড়বে।
এদিকে, দূষণ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ম্যাচের ভেন্যু বদলের কথা জানিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু তাদের সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি বিসিসিআই। এ প্রসঙ্গে গতকাল এক বিবৃতিতে বিসিসিআইয়ের নতুন প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলী জানিয়েছেন, এই আবহাওয়ায় ম্যাচ খেলতে ভারতীয় দলের কোনো সমস্যা নেই। তার এমন মন্তব্যে সম্মতি জানিয়েছেন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
কিন্তু এমন দূষণ হজম করতে ভারতীয় ক্রিকেটাররা পারদর্শী বলে তা বাংলাদেশ দলকেও হজম করতে হবে, বিষয়টি সহজভাবে নিচ্ছে না টাইগার সমর্থকরা। তাদের মতে, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডের মতো দল হলে বিষয়টি নিশ্চয় এমনভাবে মূল্যায়ন করতো না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবসময়ই অতিথি দলের সুযোগ সুবিধার দিকটি অগ্রাধিকার দেয়া হলেও বাংলাদেশ দলের প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এমন আচরণ প্রশ্নের উদ্রেগ ঘটাচ্ছে। আর তারচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বিসিবির মনোভাব।
মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে যেন বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনের হালচাল। নিজেদের গৃহদাহের ফলে সৃষ্ট বৈরিতার সুযোগে যেন দলের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশে সামান্য ইতস্তত বোধ হচ্ছে না কারোই। এমন পরিস্থিতির মাঝে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশ দলকে। সিরিজের প্রতিটি ম্যাচে লড়তে হবে জয়ের লক্ষ্যে। আর সকল প্রতিকূলতা ঠেলে জেগে উঠতে হবে লাখো কোটি টাইগারভক্তদের জন্য। সোস্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে বা কাভারে এরইমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের রঙে সাজতে শুরু করেছে টাইগার প্রেমীরা।
চল তবে আরেকবার বাঘের হুঙ্কারে কাঁপিয়ে দেয়া যাক বিশ্ব। তাতে হয়তো ক্ষণিকের ঘোর কেটে দৃষ্টি পরিষ্কার হয়ে আসবে বোদ্ধাদের। তাদের সেই অবজ্ঞা আর অবহেলা ভরা চোখে তোমাদের জন্য সমীহ দেখার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ।
এসকে/আরআইএস