• ঢাকা
  • সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮, ০৮:০৯ পিএম

ফিরে দেখা- ২০১৮ 

চমক দেখিয়েছে বয়সভিত্তিক দলগুলো 

চমক দেখিয়েছে বয়সভিত্তিক দলগুলো 
সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর বাংলাদেশি খুদে ফুটবলারদের উচ্ছ্বাস। ফাইল ফটো

 

বাংলাদেশি ফুটবল সমর্থকদের জন্য চলতি বছরটা বিশেষ ছিল বয়সভিত্তিক দলগুলোর কল্যাণে। দেশ এবং দেশের বাইরে তাদের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স হাসি ফুটিয়েছে দেশিয় ফুটবল সমর্থকদের মুখে। তবে শুধু পুরুষ নয় নারী দলগুলোও মাঠ কাঁপিয়েছে সমানতালে।   

লাল-সবুজের জার্সি গায়ে সবাই দেখিয়েছে বড় পরিসরে এখন যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত তারা। ফুটবলারদের খেলার মানের যথেষ্ট উন্নতিও চোখে পড়েছে এ সময়ে। অনেক ম্যাচ আবার দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরে হতাশায় পুড়েছে দল। তা না হলে, স্মৃতির পাতায় আরও কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত যোগ হতে পারতো এ বছর।  

ফুটবলে বছরের এমন ৫টি সফল ম্যাচ নিয়েই সাজানো হলো, ফিরে দেখা-২০১৮ এর আজকের পর্ব:  

 

৫. এশিয়ান গেমস: এশিয়ান গেমসে সবাইকে চমকে দিয়ে, শক্তিশালী কাতারকে ১-০ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। 

পুরো ম্যাচ জুড়ে দু'দল সমানভাবে লড়ে গেলেও ৯০ মিনিট পর্যন্ত খেলা গোল শূন্য থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এদিকে, অতিরিক্ত সময়ের ৩য় মিনিটেই গোল করে বাংলাদেশকে আনন্দ বন্যায় ভাসায় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। আর সে গোলেই ১৯৮৩ সালের পর প্রথমবারের মতো কাতারকে হারানোর গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ।    

 

৪. সাফ ফুটবল: সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ মহিলা টুর্নামেন্টে পাকিস্তানকে ১৭-০ গোলে হারায় বাংলাদেশের মেয়েরা। সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ, নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানের মেয়েদের কোনো পাত্তা না দিয়ে গোল উৎসবে মাতে বাংলার বাঘিনীরা। 

ভুটানের থিম্পুর চ্যাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে মারজিয়ার গোলে ডেড-লক ভাঙে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই পাকিস্তানের জালে ৮ আর দ্বিতীয়ার্ধে ৯ গোল দিয়ে পাকিস্তানকে চূড়ান্ত লজ্জা দেয় বাংলাদেশি নারী ফুটবলাররা। ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান সপ্না একাই করেন ৭ গোল। মারজিয়া করেন ৪ গোল। শিউলি আজিম করেন জোড়া গোল আর দলের অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমি, ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন, কৃষ্ণা রানি সরকার আর তহুরা খাতুন করেন একটি করে গোল।      

৩. সাফ অনূর্ধ্ব-১৫: সাফে অংশ নিয়ে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই মালদ্বীপকে ৯-০ গোলে বিধ্বস্ত করে টুর্নামেন্টে শুভসূচনা করে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের ফুটবলাররা।

কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে মোস্তফা আনোয়ার পারভেজের শিষ্যরা ম্যাচের মাত্র ১১ মিনিটেই লিড নেয়। অভিষেক ম্যাচেই গোল করেন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যান নিহাত জামান উচ্ছ্বাস। ২০ আর ২৩ মিনিটে দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের জালে আরও দুখানা গোল দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন উচ্ছ্বাস। বাংলাদেশ অধিনায়ক মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বিরতিতে যাওয়ার আগে প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে গোল করে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যায় বাংলাদেশকে। 

তবে অভিষেক ম্যাচটাকে রাঙিয়ে রাখতে তখনও বাকি ছিল উচ্ছ্বাসের ম্যাজিক। দ্বিতীয়ার্ধে নেমে নিজের চতুর্থ ও দলের পঞ্চম গোল করেন তিনি। দলের হয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম গোলটি আসে রাসেল আহমেদের পা থেকে। এরপর বদলি হিসেবে নেমে জোড়া গোল করে স্কোর লাইনকে ৯-০ তে পরিণত করেন আশিকুর রহমান। 

 

২. এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ: এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপেও চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশি নারী ফুটবলাররা। গ্রুপ-ডি এর শেষ ম্যাচে তাজিকিস্তানকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে জায়গা করে নেন কৃষ্ণা-মনিকারা।  

২৮ নভেম্বর দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করার মিশনে নামে অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলাররা। ম্যাচের ৭ মিনিটেই বাংলাদেশকে লিড এনে দেন কৃষ্ণা রানী সরকার। ২৭ আর ৪২ মিনিটে জোড়া গোল করে তাজিকিস্তানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন মনিকা চাকমা। তাজিকদের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন খালিমোভা গুলসুনবি। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে তাজিকিস্তানের জালে আরও দু'গোল দেয় তরুণীরা। গোল দুটি করেন ডিফেন্ডার শামসুন্নাহার আর মনিকা। আর ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ গোলটি করে নিজের হ্যাটট্রিকও পূরণ করেন মনিকা চাকমা।     


১. সাফ অনূর্ধ্ব-১৫: বাংলাদেশ ফুটবলে চলতি বছরে সবচেয়ে বড় সফলতা বয়ে আনে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের ফুটবলাররা। গ্রুপ আর সেমির বাধা পেরিয়ে নেপালের কাঠমান্ডুতে পাকিস্তানকে পেনাল্টি শুটআউটে ৩-২ ব্যবধানে পরাজিত করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেন আনোয়ার পারভেজের শিষ্যরা। 

সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়ে নভেম্বরের ৩ তারিখ ফাইনাল খেলতে নামে বাংলাদেশ। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচে ১-১ গোলে সমতা বিরাজ করায় ম্যাচ চলে যায় সোজা পেনাল্টি শুটআউটে। সেখানেই বলদি হিসেবে নামা গোলরক্ষক মেহেদী হাসানের বীরত্বে শেষ হাসি হাসে বাংলার খুদে ফুটবলাররা। 

এর আগে শিরোপা জয়ের প্রত্যাশায় ফাইনালে খেলতে নেমে, প্রথমে এগিয়ে যায় বাংলাদেশই। ২৫ মিনিটে পাকিস্তানের অধিনায়ক হাসিব আহমেদ খানের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এদিকে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে পাকিস্তান শিবির ম্যাচে ফিরতে আক্রমণ শানাতে থাকে বাংলাদেশের গোলবারের সামনে। সফলতা আসে দ্বিতীয় অর্ধে। পেনাল্টি পেয়ে বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতু মারমাকে পরাজিত করে পাকিস্তানকে সমতায় ফেরায় পাক ডিফেন্ডার মহিব উল্লাহ। 

পুরো ম্যাচেই টানটান উত্তেজনা কাজ করলেও, শেষ পর্যন্ত গোলবারের সামনে মেহেদীর অতিমানবীয় হয়ে ওঠায় শিরোপা নিয়েই ঘরে ফেরে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করা খুদে ফুটবলাররা।  


এসএইচএস