• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০১৯, ০৫:৩৪ পিএম

হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা : গান্ধীর অনশন 

হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা : গান্ধীর অনশন 

 

ভারত বরাবরই ধর্মীয় সহিংসতার দেশ। অখণ্ড ভারতে মূলত এ উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের অবসানের পরই শুরু হয় এ সংস্কৃতি। আর ভারত ভাগ হওয়ার পর বর্তমান ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়মিত ঘটনা। দাঙ্গা সব সময়ই রাজনৈতিক বিষয়। ছোট কোনো ঘটনাকে পুঁজি করেই শুরু হয় দাঙ্গা। এর পেছনে থাকে কারো না কারো রাজনৈতিক চাল বা স্বার্থ।

ভারতের সবচেয়ে বড় দাঙ্গা ভারত বিভাগের সময়। হিন্দুরা চেয়েছিল ভারত অখণ্ড থাকুক। আর মুসলিমরা চেয়েছিল আলাদা রাষ্ট্র পাকিস্তান তৈরি হোক। সে সময়ে সারা ভারতে দাঙ্গা হলেও মূলত কলকাতা, বিহার, নোয়াখালী এবং ঘারমুকেশ্বরে দাঙ্গা হয়েছিল সবচেয়ে বেশি। 

আগস্টের ১৬ তারিখ শুরু হয়েছিল এ দাঙ্গা। দিনটি ছিল বসন্তকালের অত্যন্ত উত্তপ্ত ও কষ্টকর দিন। সেদিন কলকাতায় মুসলমানরা তাদের বিরাট সমাবেশে যখন নেতাদের বক্তব্য শুনছিল, তখনই শুরু হয় এ গণহত্যা। হিন্দুরা আক্রমণ করে সেই সমাবেশে। হিন্দু ও মুসলমানরা ধারালো ছুরি নিয়ে একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়ায়। কলকাতায় মুসলমানদের হত্যার খবর পূর্ববাংলা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। অক্টোবর মাসে নোয়াখালী ও ত্রিপুরা জেলায় মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এতে ভয় পেয়ে হিন্দুরা ঘরবাড়ি ছেড়ে অনত্র চলে যেতে থাকে। 

কলকাতার এ ভয়ঙ্কর নরহত্যা ও ধ্বংসকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে স্টিফেনস লিখেছেন, শ্যামপুর ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মানুষের মৃতদেহের স্তূপ নিকটবর্তী বাড়িগুলোর দোতলার মেঝে বরাবর উঁচু হয়ে উঠেছিল। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর হিসাবমতে প্রায় ৫০ হাজার লোক সে সময় হতাহত হয়েছিল। মেননের মতে, ৫০ হাজার নিহত ও ১৫ হাজার আহত হয়েছিল। স্টেটসম্যানের হিসাব অনুযায়ী হতাহতের সংখ্যা ২০ হাজার কিংবা কিছু বেশি ছিল। 

যে মুসলিম জনগোষ্ঠী পুরুষানুক্রমে হিন্দু প্রতিবেশীদের মাঝে হৃদ্যতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে বিহারে বসবাস করে আসছিল, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে হঠাৎ করে হিন্দুদের এক বিরাট উচ্ছৃঙ্খল জনতা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞে নিহত মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় সাত থেকে আট হাজার। মুসলমানদের ওপর হামলা যখন একেবারেই থামছিল না, তখন অহিংস নীতির প্রতিমূর্তি মহাত্মা গান্ধী ১৯৪৮ সালের জানুয়ারির ১৩ তারিখে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন করার ঘোষণা দেন। ১৮ জানুয়ারি বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বিরলা হাউজে এসে তাকে আশ্বস্ত করেন যে, মুসলমানদের ওপর আর হামলা হবে না। তাদের কথা বিশ্বাস করে তিনি ১৯ তারিখে অনশন ভঙ্গ করেন। ভারতের গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করা করমচাঁদ গান্ধীকে তার ভক্তরা ‘মহাত্মা’ এবং ‘বাপু’ নামে ডাকতেন।