মাশরাফি বিন মুর্তজা যে ভিত তৈরি করে দিয়ে গেছেন, সেই পথে ধরে হেঁটেই যেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলকে রীতিমত অপ্রতিরোধ্য করে তুলছেন তামিম ইকবাল। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে উইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারানোর পর বুধবার দ্বিতীয় ম্যচে ৯ উইকেটে হারিয়েছে সফরকারীরা। এতে তামিমের নেতৃত্বে টানা পঞ্চম সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল টাইগাররা। সবশেষ ৭ সিরিজের ৬টি জিতেছে বাংলাদেশ।
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগার বোলারদের অনবদ্য বোলিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা অলআউট হয় মাত্র ১০৮ রানে। ১০৯ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশ দলকে। ওপেনার তামিমের দায়িত্বশীল ফিফটিতে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৯ উইকেট আর ১৭৬ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছে সফরকারীরা। এতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। বলের হিসেবে এটি তাদের তৃতীয় বড় জয়।
একদিনের ফরম্যাটে ৪৩ দেখায় উইন্ডিজের বিপক্ষে এটি ২০তম জয় লাল-সবুজের প্রতিনিদের। সবশেষ ১০ দেখায় টানা ১০ জয়। সব মিলিয়ে ৩৯৮টি ওয়ানডে ম্যাচে এটি ১৪২তম জয়। এই জয়ের মধ্যে দিয়ে ৩১তম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়ে স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
লক্ষ্য টপকাতে নেমে ওপেনিং জুটিতে কিছুটা পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ দল। এদিন ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন ভুলে লিটন দাসের পরিবর্তে তামিমের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে সুযোগ পেয়েও নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি এই বাঁহাতি। উদ্বোধনি জুটিতে ৪৮ রান যোগ করার পর ব্যক্তিগত ২০ রানে গুদাকেশ মটির বলে আকিল হোসাইনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত।
এরপর দলকে আর কোনো বিপদে পড়তে দেননি তামিম। তিনে নামা লিটনকে নিয়ে জয়ের বাকি পথ পাড়ি দেন অধিনায়ক। যদিও শঙ্কা জেগেছিল তার ব্যক্তিগত ফিফটি পাওয়া নিয়ে। দলের জয়ের জন্য ১ রান প্রয়োজনের সময় ৪৬ রানে ব্যাট করছিলেন তামিম, সেই শঙ্কা উড়িয়ে মটিকে স্ট্রেট ড্রাইভ করে চার মেরে ৬২ বলে ৭ চারে অর্ধশতক পূর্ণ করার পাশাপাশি দলকে ম্যাচ ও সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসান তামিম।
৯ উইকেট ও ১৭৬ বল হাতে রেখে পাওয়া জয়ে লিটন অপরাজিত থাকেন ২৭ বলে ৩২ রানে। যেখানে ৬টি চার মারেন এই ডানহাতি।
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে আজ উইনিং কম্বিনেশন ভেঙে একাদশে একটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে অনবদ্য বোলিং করা পেসার তাসকিন আহমেদকে বাইরে রেখে প্রায় এক বছর পর ফেরানো হয় অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনকে। সেই মোসাদ্দেকের অফ স্পিন দিয়েই ইনিংস শুরু করেন টাইগার দলপতি। তবে ইনিংসের শুরুটা বেশ দেখেশুনেই করে স্বাগতিক শিবির।
পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে কোনো উইকেট হারাতে দেননি দুই ওপেনার শাই হোপ আর কাইল মায়ার্স। এ সময় ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে স্কোর বোর্ডে ২৬ রান তোলে তারা। যদিও একাধিক সুযোগ মিসের আক্ষেপে পুড়তে হয় সফরকারীদের। সেই আক্ষেপে প্রলেপ পড়ে ১১তম ওভারে। শুরুতে সাফল্যে এনে দেন মোসাদ্দেক। একটু টেনে দেয়া বল আগেভাগে ব্যাট চালিয়ে মিস করে বোল্ড হন ১৭ রান করা মায়ার্স।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইন্ডিজের উইকেট তুলে নেন টাইগার বোলাররা। এবার দৃশ্যপটে নাসুম আহমেদ। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেও উইকেট পাননি এই বাঁহাতি স্পিনার। আজ সেই আক্ষেপে ঘোচালেন শুরুতে শামার ব্রুকসকে বোল্ড করে। বাঁহাতি স্পিনারের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে ৫ রানে ফেরেন ব্রুকস।
ইনিংসের ১৮তম ওভারে জোড়া শিকার নাসুমের। আউট করেন ওপেনার হোপ আর অধিনায়ক নিকোলাস পুরানকে। নাসুমকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দেন ডানহাতি হোপ। ফেরেন ৪৫ বলে ১৮ রানে। ওই ওভারের শেষ বলে পুরান রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন। এদিন রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
ক্রিজে এসে জ্বলে ওঠার আগেই আউট হন হার্ডহিটার রভম্যান পাওয়েল। এলোমেলো শটে উইকেট উপহার দিয়ে যান তিনি। শরিফুল ইসলামের লেন্থ বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দেন রভম্যান। ১৯ বলে ১৩ রান করে সাজঘরে পথ ধরেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
২৬ ওভারে ৬৯ রানে ৫ উইকেট হারানো দলটিকে আরো বিপর্যয়ের মুখে ফেলেন মিরাজ। তিন ওভারের ব্যবধানে একে একে ফেরান ব্রেন্ডন কিং (১১), শেফার্ড (৩) ও আলজারি জোসেফকে (০)। মাঝে ২ রান করে আউটে কাটা পড়েন আকিল হোসাইন। এতে ৮৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে একশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে উইন্ডিজ। তবে শেষ উইকেটে কিমো পল আর গুদাকেশ মটির ২২ রানের পার্টনারশিপে ১০৮ রানে থামে ক্যারিবীয়দের ইনিংস।
৬ রানে থাকা মটিকে মিরাজ ফেরালে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। ইনিংস সর্বোচ্চ ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন পল। বাংলাদেশের হয়ে মিরাজ নেন চারটি আর নাসুম নেন তিনটি করে উইকেট।